দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ তরুণ আত্মহননের পথ বেছে নেয়, তাদের সিংহ ভাগই ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী স্কুলগামী কিশোর-কিশোরী। ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারীদের ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ বয়ঃসন্ধিকালীন এই শ্রেণি। ২০২৪ সালে দেশে ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে, ২০ থেকে ২৫ বয়সী তরুণ শ্রেণি। আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ১২ বছর বয়সী শিশুর আত্মহত্যার হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা অতি উদ্বেগের বিষয়। সবচেয়ে কম আত্মহননপ্রবণ ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ। আত্মহত্যাকারীদের ৬১ শতাংশই নারী। অন্যদিকে, ২০২২ সালে ৫৩২ জন এবং ২০২৩ সালে ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সেই হিসাবে বিগত দুই বছরের চেয়ে এবার আত্মহত্যার হার কম। তাদের মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের দেশীয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রদর্শিত নাটক, সিনেমা-চলচ্চিত্র, টেলিফিল্মে জীবনঘনিষ্ঠ হতাশাগ্রস্ত দৃশ্যে আত্মহত্যার দৃশ্য থাকে। কিভাবে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচাতে হয় কিংবা ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করা যায়Ñ এ সব দৃশ্য দেখে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা এই বিধ্বংসী পথে পা বাড়ায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে আরও কঠোর মনিটরিং করতে হবে স্পর্শকাতর দৃশ্য প্রদর্শনে। দেশে বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তরুণদের আত্মহননের প্রবণতা বেশি দেখতে পাওয়া যায়। জীবনের শুরুতেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া কখনোই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে মা-বাবাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। সন্তানের চেয়ে মহামূল্যবান সম্পদ আর কিছু নয়। তাদের প্রতি এমন কোনো মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না, যাতে করে তারা চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহননের ধ্বংসযজ্ঞের দিকে ধাবিত হয়। বিবিএস-এর জরিপে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছেন, গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ৩৫ জন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। আমাদের দেশে স্কুলপড়ুয়া, এসএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা খুব বেশি। ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এ হার ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতাও ক্রমেই বাড়ছে। আমাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানরা নানাভাবে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে, পানিতে ঝাঁপ দিয়ে, চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে, ছুরি দিয়ে আঘাতে, ঘুমের ওষুধ খেয়ে, বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে আত্মহনন করছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধুসুলভ মানুষ গড়ার মহান কারিগরগণ শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করবেন। একই সঙ্গে প্রতিটি পরিবারের বাবা-মা সন্তানের সার্বিক চলাচলের ওপর সূক্ষ্ম নজরদারি রাখতে পারলেই কেবল আত্মহত্যার মতো আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে দেশ-জাতি রক্ষা পেতে পারে।
আর নয় আত্মহত্যা
শীর্ষ সংবাদ: