ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১

পরিবেশ দূষণ ও প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ২০:২০, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

পরিবেশ দূষণ ও প্রতিরোধ

বাংলাদেশ বর্তমানে উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। গত সপ্তাহে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা ও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে গত কয়েকদিন সারাদেশে অভিযান চালিয়ে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১০৬টি ইটভাঁটি বন্ধ করে দিয়েছে ভ্রাম্যমণ আদালত। পাশাপাশি ১০০ টন পলিথিনসহ কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস’ (সিইএ) প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণ তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক এবং নারীদের। বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সীসা দূষণ বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি অকালমৃত্যুর কারণ।
বিশ্বে দূষণের তালিকায় ঢাকার বাতাসের মাত্রা বর্তমানে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে, যা রীতি মতো উদ্বেগজনক। পরিবেশ দূষণের বেশিরভাগ কারণই মানবসৃষ্ট। দেশের বায়ুদূষণের জন্য ইটভাঁটিও অনেকাংশে দায়ী। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্নাও বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। ইটভাঁটির ধোঁয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। দেশের বেশিরভাগ ইটভাঁটি চলছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব ইটের ভাঁটি, যেগুলোর বেশির ভাগেরই নেই কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র। ফসলি জমির মাটি ও বাগানের গাছ উজাড় করে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এতে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে মানুষের রোগবালাই। বিশেষ করে বায়ু দূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বাতাসের ক্ষতিকর সীসার বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশের অন্তরায়। আবার শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকেও আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি।
নানাবিধ চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। যেগুলোর কারণেও পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে থাকে। তবে এই পরিবর্তন যেন মানব জাতির জন্য ক্ষতিকর কিংবা অস্তিত্বের জন্য হুমকি না হয়ে ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখা চাই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে যথাযথ পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা, সবুজায়নে অর্থায়ন বাড়ানো, কার্যকর কার্বন মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা জরুরি, একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নও প্রয়োজন। তবে পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করা যায় না। দেশের টেকসই উন্নয়নে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

×