লাইব্রেরি নাম শুনলেই এখনো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ভাবনায় ফুটে উঠে সারি সারি বইয়ের চিত্র। শুধুমাত্র সারি সারি বইয়ের ধারণা থেকে লাইব্রেরি বের হয়ে এসেছে অনেক আগেই। সেই আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি অথবা আসুরবানিপাল লাইব্রেরি থেকে বর্তমান অগ্রসরমান বিশ্বের লাইব্রেরির ধারণা পাঠকের চাহিদা পূরণে সামর্থ্য। সময়ের সাথে সাথে পাঠকের চাহিদা ও সেবা প্রদানের কথা মাথায় রেখে লাইব্রেরি ডিজাইন করা হচ্ছে। এমনকি নানাধরণের কাজে লাইব্রেরিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি এর ব্যবহারও লক্ষ্য করা যাচ্ছে সা¤প্রতিক সময়ে। বর্তমান সময়ের আধুনিক লাইব্রেরিতে বইয়ের পাশাপাশি জ্ঞানার্জনের কাজে ব্যবহার করা যায় সব ধরনের উপকরণই সংগ্রহে রাখা হয়। বই, জার্নাল, পত্র পত্রিকা, সাময়িকী ছাড়াও অডিও-ভিডিও, টেপ রেকর্ডিংস, সিডি, ডিভিডি, মাইক্রোফর্ম, মাইক্রোফিল্ম, ম্যাপ, ই-ইবুক, কম্পিউটার, ইন্টারনেট একসেস সহ সবধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান লাইব্রেরির সংগ্রহে থাকে। আধুনিক যুগের লাইব্রেরি আরও বেশি সমৃদ্ধ ও সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন।
লাইব্রেরির গুরুত্ব, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে লাইব্রেরির ভ‚মিকা, জাতি গঠনে লাইব্রেরির ভুমিকা নিয়ে ছোট থেকেই আমরা বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকায় পড়ে আসছি, সভা সেমিনারে বক্তব্য শুনে আসছি। কিন্তু সমাজে প্রভাব ফেলতে পারার মতো লাইব্রেরি আমরা কি গঠন করতে পেরেছি? সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য লাইব্রেরিকে গ্রহণযোগ্য করতে পেরেছি?
একাডেমিক, পাবলিক, স্পেশালসহ বিভিন্ন ধরনের লাইব্রেরির ধারণা রয়েছে। তার মধ্যে পাবলিক লাইব্রেরিই সর্বস্তরের মানুষকে সেবা প্রদান করতে পারে। এজন্য সবার আগে পাবলিক লাইব্রেরিগুলো সমৃদ্ধ করা দরকার। বই ও অন্যান্য লাইব্রেরি সামগ্রীসহ আরও নানা ধরনের আধুনিক পরিসেবা উন্মুক্ত করা দরকার। লাইব্রেরিতে এমন একটা পরিবেশ তৈরী করা উচিৎ যেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ লাইব্রেরিমুখী হয়ে উঠে। পড়াশোনা অনেকের কাছেই একটা একঘেয়ে কাজ। তাই লাইব্রেরিতে একটা গুরুগম্ভীর ও একঘেয়ে পরিবেশ তৈরী না করে একটা বিনোদন কেন্দ্রের মতো করেই তৈরী করা উচিৎ। যেটা একই সাথে জ্ঞানার্জন ও মানসিক বিকাশে সহযোগিতা করবে।
সকল বয়সের পাঠকের জন্য আলাদা আলাদা করে সংগ্রহ তৈরী করা এবং সবার জন্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার। ছোট বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার সেবা লাইব্রেরি থেকেই হতে পারে। নিরক্ষর পাঠকদের জন্য তাদের উপযোগী করে স্পেশাল সংগ্রহ তৈরী করা দরকার। সেগুলো হতে পারে ছবির মাধ্যমে শিক্ষা অথবা ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন। কিশোর-কিশোরীদের জন্য তাদের বয়স ও পছন্দের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ লাইব্রেরি ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ ও আরামদায়ক পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা, পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য একটিভিটিস যেমন ড্রয়িং করা ও শেখার সুযোগ, দাবা, ক্যারম, টেবিল টেনিস ও অন্যান্য ইনডোর স্পোর্টস এর সুযোগ থাকা, ক্ষুদ্র পরিসরে শারিরীক কসরত অনুশীলনের জন্য জিম কর্নার থাকা। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে যে কোন তথ্যচিত্র উপভোগ করানো যেতে পারে। যেন কোন একটা জটিল বিষয় পাঠকেরা খুব সহজে ভিজুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে শিখতে বা আয়ত্ত করতে পারে। বাচ্চা ও কিশোর- কিশোরীদের সামাজিক মানসিক বিকাশ ও সামাজিক হয়ে উঠতে লাইব্রেরিকে সর্বোচ্চ ব্যাবহার করার ধারণা এখন বিশ্বব্যাপি খুবই জনপ্রিয়। ক্ষুদা, ক্লান্তি ও অবসাদ দুর করতে লাইব্রেরিতে ফার্স্টফুড-কফি কর্নার থাকতে পারে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সেবা কম্পিউটার ও উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট থাকা দরকার। একই সাথে একটা লাইব্রেরিতে শব্দহীন, নিরবিচ্ছিন্ন পড়াশোনার পরিবেশ রক্ষা করাও দরকার। লাইব্রেরির সাথে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য লাইব্রেরি থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে। ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি সেবা প্রদান করা যেতে পারে।
সর্বোপরি জনসাধারণকে লাইব্রেরির সাথে সংযোগ স্থাপন করাতে আধুনিক লাইব্রেরি সেবার সবধরনের সেবা প্রদান করা দরকার। এতে করে লাইব্রেরিমুখী একটা সমাজ থেকে সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক, সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং একই সাথে সচেতন নাগরিক গড়ে উঠবে। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লাইব্রেরিগুলো সমৃদ্ধ করা যেতে পারে।
শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়