ছবি: সংগৃহীত
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২৪-২০২৫-এর ফাইনাল ম্যাচ এক ভিন্ন আবহের সৃষ্টি করে। টুর্নামেন্টের সমাপ্তি উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন বিএনপি'র মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ঐতিহাসিক সন্ধ্যায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বিসিবি সাবেক কোশাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইউসা মিশু, সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, এবং বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনসহ আরো অনেকে।
গত ১০ নভেম্বর শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট বিএনপির সাংগঠনিক ১০টি বিভাগকে কেন্দ্র করে আয়োজিত। প্রতিটি বিভাগে লাল এবং সবুজ নামে দুটি করে দল অংশগ্রহণ করে। বিভাগীয় ম্যাচগুলো শেষে ঢাকায় মূল পর্ব শুরু হয় ১৬ জানুয়ারি, যেখানে যোগ দেয় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের দুটি দল। এর থেকে উত্তীর্ণ দুই ফাইনালিস্ট দল রংপুর ও সিলেট বিভাগের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মিরপুরের মাঠে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।
ফাইনাল ম্যাচ উপলক্ষ্যে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে দর্শকদের জন্য টিকিট ছাড়াই প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। বিএনপি'র শত শত নেতাকর্মী, সমর্থক এবং ক্রীড়াপ্রেমীরা মাঠে এসে টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য বাড়িয়েছেন। স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোণ উল্লাস আর গর্জনে মুখরিত ছিল, যেন এটি শুধু একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয়, বরং পুরো দেশের ঐক্যের একটি প্রতীক।
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের পেছনে মূল চিন্তাবিদ ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক, বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এক অনন্য নাম, সাবেক সেরা গোলরক্ষক জাতীয় দলের অধিনায়ক আমিনুল হক। এর আগেও তিনি সফলভাবে আয়োজন করেছেন আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট। পাশাপাশি, বর্তমানে ঢাকায় চলছে ঢাকা উত্তর বিএনপির উদ্যোগে জিয়া আন্তঃথানা ফুটবল টুর্নামেন্ট। ক্রীড়াঙ্গন দল মত নির্বিশেষে সবার হবে, এমন প্রত্যয় ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছেন আমিনুল হক।
ফাইনাল খেলায় আমিনুল হক বলেন, “বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছি, নতুনভাবে স্বাধীন করেছি। সেই নতুন স্বাধীন দেশে- স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে আমরা নতুনভাবে সবকিছু শুরু করতে চাই।এই জন্য বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সকল সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে আমরা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।তারেক রহমান সারা বাংলাদেশের তৃণমূলে খেলাধুলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছেন উল্লেখ করে সাবেক সাফজয়ী এই ফুটবলার বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২৪-২৫ ইং শুরু করেছিলাম এবং আমাদের মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট চলমান রয়েছে।আমরা তারেক রহমানের নির্দেশে শুরু করেছি মাত্র,সামনে আস্তে আস্তে আরও অনেক নতুন কিছু আপনাদের সামনে উপস্থাপিত হবে এবং এই টুর্নামেন্ট এর শেষে সামনে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে মেয়েদের ক্রিকেট এবং ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে।“
আমিনুল হক—একটি নাম, একটি ইতিহাস। ফুটবলের গোলপোস্টের সামনে যে মানুষটি দেশের জন্য বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, একইভাবে রাজনীতির ময়দানে তিনি হয়ে উঠেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক অদম্য প্রতিরোধের প্রতীক। তার জীবনের গল্প কেবল একজন ক্রীড়াবিদ কিংবা রাজনীতিবিদের নয়, বরং এক সত্যিকারের দেশপ্রেমিক যোদ্ধার জীবনগাঁথা।
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে তিনি যেমন মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, তেমনই মাঠের বাইরেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন সাহসী এক যোদ্ধা হিসেবে। দেশের জন্য তার অগণিত ত্যাগ, মাঠে ও মাঠের বাইরে তার লড়াই আমাদের সকলের জন্যই এক বিশাল অনুপ্রেরণা।
ফুটবলে তার অনন্য দক্ষতা এবং ত্যাগী মনোভাব তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডে খেলার সুযোগ পেয়েও তা হারানো শুধু তার জন্য নয়, পুরো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। দেশের ফুটবলে নতুন প্রজন্মের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে পুনর্জাগরণ ঘটানোর স্বপ্নে বিভোর।
রাজনীতিতে যোগদান করার পর তিনি হয়েছেন দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একজন নির্ভীক সৈনিক। বিএনপির হয়ে লড়াই করতে গিয়ে তাকে সহ্য করতে হয়েছে নির্মম অত্যাচার, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তবু তিনি হার মানেননি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার অবস্থান, গণতন্ত্রের প্রতি তার অটুট বিশ্বাস, এবং দেশের জন্য তার অপরিসীম ভালোবাসা তাকে এক অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
আমিনুল হকের জীবনে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো তার মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত, তার ছুটে চলা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে। তিনি কেবল একজন নেতা নন, তিনি মানুষের হৃদয়ের একজন আপনজন। শীতার্তের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ, ক্রীড়া আয়োজন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ—প্রতিটি কাজেই তিনি নিঃস্বার্থভাবে যুক্ত।
তাকে নিয়ে যে আবেগের কথা বলা হয়, তা শুধু তার ফুটবল কিংবা রাজনৈতিক জীবনের জন্য নয়, বরং তার সহজ-সরল জীবনধারা এবং মানুষের প্রতি আন্তরিকতার জন্য। রাজনীতির বিভাজন এবং প্রতিহিংসার মধ্যেও তিনি বারবার বলেছেন, "আমার উপর যা হয়েছে, তা যেন আর কারও উপর না হয়।" তার এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের শিক্ষা দেয়, কীভাবে সত্যিকারের নেতারা জনগণের হৃদয়ে জায়গা করে নেন।
আজ যখন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন এবং রাজনীতি এক অনিশ্চিত সময়ে দাঁড়িয়ে, তখন আমিনুল হকের মতো মানুষের প্রয়োজন আরও বেশি অনুভূত হয়। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়, তার লড়াই, তার ত্যাগ, এবং তার আদর্শ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক মহাকাব্যিক উদাহরণ হয়ে থাকবে।
আমিনুল হক, আপনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, আপনি বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ, এক অনুপ্রেরণার নাম।
জাফরান