মানুষের জীবন বৈচিত্র্যে ভরপুর। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কখনো কখনো ভালো সময়ের পাশাপাশি খারাপ কিংবা খুব কঠিন সময়ে আসে। তখন কিছুই ভালো লাগে না। সবকিছু অসহ্য ঠেকে। কারও কারও জীবনে যদি সেই সময় আসে তখন হয়তো বাঁচার ইচ্ছাও কমে আসতে পারে। তখন নিজেকে যথাসাধ্য গোপন করা, আড়ালে থাকাই ভালো। কখনো কখনো নিজের ভালোর জন্যও একা হতে হয়। জনসমাগম থেকে দূরে যেতে হয়। নিজের দুঃখ-কষ্ট অন্যকে না দেখানোতেই মঙ্গল। তবে যদি কেউ ভরসা হয়, পাশে দাঁড়ায় কিংবা সাহস জোগায় তার সঙ্গে দুঃখ ভাগাভাগি করলে বুকের চাপ কমে। জমা ব্যথার বরফ গলতে শুরু করে।
তবে বিশ্বাস গড়ার চেয়ে আজকাল আশপাশে বিশ্বাস ভাঙে বেশি লোকে। মানুষ মানুষের দুর্বলতা জেনে সেটা নিয়ে খোঁচা মারে। অল্প ব্যথাও দ্বিগুণ করে ফেরত দিতে এগিয়ে এসে। সে জন্যই নিজের ব্যথা, দুঃখ-কথা কিংবা জীবনের জটিল সময় নিজের মধ্যে কবর দেওয়া ভালো। জীবনের কঠিন সময়ের খবরগুলো নিজের মধ্যে এমনভাবে আড়াল করতে হবে যাতে শরীর ঘেঁষা মানুষটিও খুব অল্পই টের পায়। ভেঙে পড়ার খবরে যদি ঘর-বাজার সয়লাব হয়ে যায় তবে যত মানুষ তোমায় টিকে থাকতে সাহায্য করবে তার চেয়ে কোটিগুণে তোমার শেষ সীমায় পতন পর্যন্ত দেখার অপেক্ষায় থাকবে। হাততালিতে উল্লাস করার প্রস্তুতি সারবে। যেহেতু মানুষ চেনা সহজ কাজ নয় সেহেতু ভুল মানুষের কাছে বিশ্বাস তুলে দিয়ে ব্যথা বাড়িও না।
জীবনের বহু প্রান্ত থেকে বহুবার ঝোড়ো বাতাস আসবে। পুড়ে ছারখার করে দেবে মনের সাজানো বন। আকস্মিক ঝড়ে ঝরে যাবে জীবনের বৃন্ত হতে সব সবুজ লতাপাতা এবং ফুল। তাই বলে নিজেকে অসহায়ভাবে সঁপে দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জীবনের পরাজয় দেখবেন? মোটেও না। শক্ত হোন। সামান্য বাতাসে জীবনকে এলোমেলো হতে দেওয়া যাবে না। হাল্কা আঘাতে ভাঙতে দেওয়া যাবে না বিশ্বাস। জীবনের খারাপ সময়ে শক্তভাবে হাল ধরে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে ভালো সময়কে বরণের আশায় বাঁচতে হবে।
কখনো কান্না পেলে, একাই কাঁদেন। অন্যকে চোখের জল দেখালে সে তোমায় দুর্বল হিসেবে পেয়ে বসবে। জীবন যত বড় দুঃখ আসুক, যত গহিন ক্ষত তৈরি হোক কিংবা যত গভীর বেদনার সাগর সৃষ্টি হোকÑ কাউকে জানানো যাবেন না। একাই নিজেকে সামলান। মনে রাখা চাই, যে নিজের জন্য আলো হতে পারে না, দুনিয়ার সমস্ত আলো মিলেও তাকে পথ দেখাতে পারে না। অধিকাংশ মানুষ নিষ্ঠুর এবং নির্দয়। যেহেতু কেউ নিশ্চিতভাবে জানেন না যে, কে কোমল আর কে সদয়! কে বিশ্বাসের অমর্যাদা করবে না! সেহেতু ভুল মানুষের কাছে, ভুল ঠিকানায় গিয়েÑ বাঁচার শেষ আশার প্রদীপটুকুও নিভিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। স্বভাবতই কিছু মানুষ ভেঙে যাওয়া মৌচাকে ঢিল ছুড়ে আরও বেশি ভেঙে দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পায়।
নিজের জন্যই বাঁচতে হবে, নিজেকে ভালো রাখতে হবে। যেখানে সম্মান আছে সেখানে নিজেকে রাখুন। যারা বিশ্বাস রক্ষা করে তাদের সঙ্গে থাকুন। একজীবনে অনেকগুলো ভুল মানুষ জীবনে এন্ট্রি নেবে। সেই আপদগুলোকে কীভাবে ডিল করছেনÑ সেটার ওপরেই আপনার সুখ-শান্তি নির্ভর করবে। কারও কাছে সবকিছু তুলে দেওয়ার আগে বুঝেশুনে এগোবেন। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমরা সময়কে দোষারোপ করি। অথচ ভুল সময় বলে কোনো সময় নেই। আমরাই সময়কে বিষিয়ে তুলি। জীবনে ভালো থাকাটা খুব জরুরি। বিশ্বাসবিহীন পৃথিবীতে ভালো থাকা যাবে না।
[email protected]
