ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

শিক্ষার শূন্যপদে নিয়োগ

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

শিক্ষার শূন্যপদে নিয়োগ

কোনো দপ্তরে স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিক কারণে এক বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়ে পড়তে পারে। সেগুলো পূরণের জন্য আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে সক্রিয় হওয়া চাই। ঢালাও পদত্যাগ, গণবদলি ও নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় শিক্ষা প্রশাসনে এরই মধ্যে কিছুটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার দপ্তরগুলোর শীর্ষ পদে নিয়মিত কর্মকর্তা না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের গতি কমে গেছে। ফলে, প্রভাব পড়ছে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মহাপরিচালক, শিক্ষা প্রকৌশল প্রধান প্রকৌশলী, দুই শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ পদ এখনো পূরণ হয়নি। এসব দপ্তরের পরিচালকের একাধিক পদে জনবলের সংকট রয়েছে। শূন্যপদসমূহে কর্মকর্তা নিয়োগ হবে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। এখানে তদবির কিংবা অনৈতিক পন্থার কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়। অথচ বিভিন্ন দপ্তরে দলীয় লেজুড়বৃত্তিসহ ঢালাওভাবে চলছে তদবির। এতে অনেক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেদের দপ্তরের চেয়ে মন্ত্রণালয়েই বেশি সময় দিচ্ছেন। অনেক কর্মকর্তা আবার নিজ অফিসকে রাজনৈতিক অফিসের আদল দিয়ে ফেলেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এটা সত্যি যে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আস্থাযোগ্য কর্মকর্তার সংকট রয়েছে। যাদের সিনিয়র অফিসার পদগুলোতে আসার কথা; তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে পুনরায় নিয়োগদানে কিছুটা সময় লাগা স্বাভাবিক। তবে বেশি সময় নিলেই নানা প্রশ্ন ওঠে। যেমন, শিক্ষা প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শিক্ষা ভবন এখন অভিভাবকশূন্য। গত ১৫ দিন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদটি শূন্য রয়েছে। অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদ কলেজ ও প্রশাসন এবং অর্থ ও ক্রয় উইংয়ের পরিচালক পদও ফাঁকা।
এদিকে ঈদের পরেই এপ্রিলের শুরুতে এসএসসি পরীক্ষা আরম্ভ হবে। তারপর এইচএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলো প্রস্তুতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য। সাধারণত ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি হন। ফলে, গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি শূন্য থাকায় কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তৎকালীন চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেন। সেখানে নিয়োগ পান এনসিটিবির একজন সাবেক সদস্য। শীঘ্রই অবসরে যেতে হচ্ছে তাঁকে। এনসিটিবির শীর্ষ পদও শূন্য হয়ে পড়বে। প্রতিবছর বই ছাপানোর কারণে কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ করে থাকে এনসিটিবি। ফলে, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদে বসতে ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। এখন এটিতে নিয়োগবাণিজ্য হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
শিক্ষা প্রশাসনের শূন্য পদসমূহে দ্রুত কর্মকর্তা নিয়োগ দান বাঞ্ছনীয়। জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, এটাই প্রত্যাশা। তবে যারা নিজ কাজ ফেলে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে নিয়োগ প্রত্যাশায় তদবির করে মন্ত্রণালয়ে সময় ক্ষেপণ করছেন, তাদের চিহ্নিত করা চাই। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে, অনুসন্ধানের ভেতর দিয়ে সরাসরি তাদের নামপরিচয়সহ অনৈতিক কার্যক্রম তুলে ধরা। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও করণীয় রয়েছে। তদবির কাজে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বিধি অনুযায়ী অফিসের সময়ে অফিসে অনুপস্থিত থেকে কর্মঘণ্টার অপচয়ের জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তা না হলে শিক্ষার গতি কিছুতেই বাড়ানো যাবে না।

×