ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

একীভূত বিনিয়োগ সংস্থা

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

একীভূত বিনিয়োগ সংস্থা

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ পেলে একটি দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে বৈদেশিক বিনিয়োগ থেকে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বৈদেশিক বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে গোটা দুনিয়া আজ একটি গ্রাম। পৃথিবীর কোন্ প্রান্তের কোন্ জনপদে, কোন্ জাতি গোষ্ঠী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তা খুবই সুস্পষ্ট। চরম প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়তে স্বাগতিক দেশকে অনেক অগ্রগামী ও দূরদৃষ্টিপূর্ণ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হয় সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে। বাংলাদেশের শিল্প খাতে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিযোগিতামূলক শ্রমব্যয়, বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও পরিবেশ কোরিয়ান ব্যবসায়ীদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল হতে পারে। ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং ও হুন্দাই বাংলাদেশের স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সস্তা শ্রমের এই দেশে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও বিনিয়োগবান্ধব আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা কোরিয়ানদের ব্যাপক উৎসাহ জোগাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে দক্ষিণ কোরিয়ান মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইয়ানওয়ান। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নির্মাণ করছে। যেখানে প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশী তরুণ-যুবক আন্তর্জাতিক মানের কর্মশক্তির দক্ষতায় নিজেদের সমৃদ্ধ করবে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন উত্তর ব্যবসায় পরিবেশে ইতিবাচক মোড় নেওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক কোম্পানি নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। দেশটির অনেক কোম্পানি বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে পোশাক কারখানা পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ‘ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড’ (ইডিসিএফ) থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা পাওয়া দেশ। ৩৪টি প্রকল্পে প্রাপ্ত ঋণের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আরও ১৪টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষাধীন। এই প্রকল্পগুলো চালু হলে কোরিয়ান বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ১৯৭৪ সালের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া ওডিএ (সরকারি উন্নয়ন সহায়তা) গ্রহণকারী দেশ ছিল। বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়নে প্রাচ্যের এই দেশটি পরীক্ষিত বন্ধু। দেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে অগ্রগামী ও পরীক্ষিত বন্ধু দেশগুলোর মাঝে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে বিনিয়োগবান্ধব, বাণিজ্যিক কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে এবং প্রতিনিয়ত বিশেষজ্ঞগণের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৯৭২ সালের ১২ মে কোরিয়া বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে আরএমজি সহযোগিতা ১৯৭৮ সালে শুরু ১৩৩ বাংলাদেশী কর্মীর কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এ সকল কর্মী দেশে ফিরে এসে আরএমজি শিল্পের বিকাশে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। সময়ের হাত ধরে চট্টগ্রামে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অন্যতম। দেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্প খাতের উৎপাদন, আইসিটি ও শিল্প অবকাঠামোসহ বহুমাত্রিক ক্ষেত্রে বন্ধুপ্রতিম দেশের আরও বিনিয়োগ বাড়াতে একই ছাদের নিচে সব বিনিয়োগ সংস্থাকে নিয়ে আসার ঘোষণা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সময়োপযোগী ও সাহসী উদ্যোগ। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোরিয়ান ইপিজেডের জমির অধিকার সংক্রান্ত সমস্যার আশু সমাধানের নির্দেশ দান বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহ দেবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অধিক জনসংখ্যার কর্মক্ষম যুবশক্তির আগামীর বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট পাঁচটি সংস্থাকে একই দপ্তরের অধীনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের লাগাম টানতে পারলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

×