ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র সংক্রান্ত  বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, গণতন্ত্র মঞ্চ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো  তড়িঘড়ি কাম্য নয়। জুলাই  গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে আরও আলোচনা হওয়াই সমীচীন। কাজটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হতে পারে বলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে এ বিষয়ে দ্রুত একটি কর্মকৌশল ঠিক করা হচ্ছে। এই ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করেই জাতিকে অবহিত করে বলেছেন, ‘৫ আগস্ট ছিল আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতীক। ওই দিনের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। তাই এখন কিছু করতে হলে সবার মতামতের ভিত্তিতেই করতে হবে। কাজেই জুলাই ঘোষণাপত্র সবার মতামতের ভিত্তিতে করতে চাই।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও দলিল সংরক্ষণের স্বার্থে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, এ ছাড়া এই অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক, আইনি ও আন্তর্জাতিক ভিত্তি এবং জনসমর্থন আদায় করা কঠিন হবে। এমনকি বিদ্যমান সংবিধানের বিরুদ্ধে সংঘটিত এই গণঅভ্যুত্থানের আইনি ভিত্তি দেওয়া তাদের বিবেচনায় ছিল। পরে ৩০ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে তারা জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করবে। ছাত্ররা প্রাথমিকভাবে সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি সমাবেশ করে এবং ওই সমাবেশ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারির আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ঘোষণাপত্রের খসড়ায় তুলে ধরা হয়েছে এই ভূখণ্ডের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রামের প্রসঙ্গ। পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কথাও খসড়ায় তুলে ধরা হয়। এরপর বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে কিভাবে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, সে প্রসঙ্গও রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়, ‘আমরা, ছাত্র-জনতা সেই অভিপ্রায়বলে আত্মমর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যে আদর্শে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করলাম। আমরা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতা রক্ষার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানালাম। আমরা সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।’ বৈঠকে সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ইউনূস রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে একসঙ্গে বসায় সারা জাতি আজ সাহস অনুভব করবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং সুন্দরভাবে এর সমাধানও হয়েছে।’ প্রধান উপদেষ্টার কথায় এটি স্পষ্ট যে মতভেদ নয়, বরং ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণীত হওয়া সমীচীন।

×