ট্রুডো ও ট্রাম্প
প্রায় এক দশক দায়িত্ব পালনের পর দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সমালোচনার মুখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। গত ৬ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন। ২০১৩ সালে লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তখন এই দলটি গভীর সমস্যায় পতিত হয়েছিল। প্রথমবারের মতো দলটি হাউস অব কমন্সে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছিল। লিবারেল পার্টির পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে নির্বাচন করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ট্রুডো দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিকভাবে চাপের মুখে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে তিনি চাপে পড়েন। বর্তমান সময়ে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা তো বটেই, নিজ দলের মধ্য থেকেও তাঁর পদত্যাগের দাবি উঠছিল। দেশটির রাজনীতিতে তিনি অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। ব্যাপক প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম দেশ কানাডা এখন ট্রুডোর হাতে নিরাপদ নয় বলে অধিকাংশ কানাডিয়ান মনে করেন। ট্রুডো সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হই, তখন থেকেই কানাডার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছি। মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে মজবুত করার জন্য আমি কাজ করেছি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেবা করার সুযোগ পাওয়ায় আমি গর্বিত। করোনা মহামারির সময়ে আমি দেশের মানুষের পাশে থেকে সেবা করতে পেরেছি। দেশের গণতন্ত্রকে মজবুত করার জন্য কাজ করেছি’। তিনি আরও বলেন, কয়েক মাস ধরে বাধার কারণে পার্লামেন্ট পুরোপুরি অচল হয়ে আছে। একই কারণে কয়েক মাস ধরে উৎপাদনশীলতার ঘাটতি রয়ে গেছে। এখন নতুন করে শুরু করার সময়। কানাডার রাজনীতিতে উত্তাপ কমিয়ে আনার জন্য তা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ‘জটিল’ সময়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পার্লামেন্টে একটি নতুন শুরু দরকার। ২০১৫ সালে কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা করেননি, কানাডার সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকেও নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।
ট্রুডোর পদত্যাগের ফলে কানাডার ক্ষমতাসীন দলটি রাজনৈতিক মাঠে এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে লিবারেলরা রক্ষণশীলদের নিকট শোচনীয়ভাবে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রুডো পদত্যাগ করার পর আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে। এবার নেতা নির্বাচনের জন্য লিবারেলরা বেশি সময় পাবেন না। তবে দলের নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ধারণা দিয়েছেন ট্রুডো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশব্যাপী একটি ‘শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে। গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জেতার পর ট্রুডো তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ট্রাম্প সেই সময় ট্রুডোকে গভর্নর বলে সম্বোধন করেছিলেন। কানাডা যদি অনুপ্রবেশকারীদের এবং বেআইনি মাদক আমেরিকায় প্রবেশের ওপরে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপরে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ট্রুডোকে এ সময় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এবং কানাডার টিকে থাকতে যে ভর্তুকির প্রয়োজন তার ভার যুক্তরাষ্ট্র আর বইতে পারবে না। তবে কানাডা যদি অঙ্গরাজ্য হতে চায়, তবে ট্রাম্প নীতি পাল্টাবেন। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভের পর আমেরিকান ডলারের বিপরীতে কানাডিয়ান ডলারের দ্রুত দরপতন হয়। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই এ বিনিময় হার আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এমন পরিস্থিতিতে কিছুদিন আগে কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করলে ট্রুডো আরও চাপে পড়েন। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে ট্রুডোর নিকট প্রেরিত পত্রে ফ্রিল্যান্ড উল্লেখ করেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় সৎ ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত হিসেবে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি আরও লিখেন, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মোকালিা করতে কানাডাকে মূলধন প্রস্তুত রাখতে হবে। এতে কানাডার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের দ্বিমত পোষণ করেন তিনি। এর আগে কানাডার অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্রিস্টিয়াকে আর দেখতে চান না বলে ট্রুডো জানিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রীর পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অন্য কোনো পদ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলেন ট্রুডো। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের কারণে ট্রুডো তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পতিত হয়েছেন।
গত ৭ জানুয়ারি ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণার পর ট্রাম্প নতুন করে বিষয়টি সামনে আনেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এতে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দেখানো হয়েছে। প্রকাশিত এই মানচিত্র নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে একীভূত করা টুইট নিয়ে দুই দেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে কানাডা-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনাকর বিবৃতি হিসেবে দেখছেন। কানাডিয়ান নাগরিকদের কেউ কেউ এটিকে অসম্মানজনক বা অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদী বলে সমালোচনা করেছেন। কানাডার অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হতে ইচ্ছুক, ট্রাম্পের এমন দাবি নাকচ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ৮ জানুয়ারি এক পোস্টে ট্রুডো লিখেন, কানাডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নরকেও নেই। তিনি আরও লেখেন, আমাদের দুই দেশের শ্রমিক এবং সম্প্রদায় একে অপরের সবচেয়ে বড় ব্যবসা এবং নিরাপত্তা অংশীদার হয়ে উপকৃত হয়। ট্রাম্প কানাডাকে ৫১তম রাজ্যে পরিণত করতে ‘অর্থনৈতিক শক্তি’ ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মূলত বাণিজ্য ও অভিবাসন সমস্যা নিয়ে ট্রুডোর প্রশাসনের ওপর ট্রাম্প সন্তুষ্ট ছিলেন না। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরির্বতন করে আমেরিকা উপসাগর করতে ইচ্ছুক বলে মন্তব্য করেন। এর আগে তিনি পানামা খাল দখল করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র এই খালটি তৈরি করলেও প্রায় ২৫ বছর ধরে এর নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতেই রয়েছে। এরপর কানাডা ও গ্রিনল্যান্ড নিয়েও তিনি একই ধরনের বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এমনকি প্রয়োজন হলে শক্তিও প্রয়োগ করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি বলেন, কানাডা কখনো এই ক্ষেত্রে পিছু হটবে না। জোলি অভিযোগ করে বলেন, ট্রাম্প কানাডার চরিত্র বুঝতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতি খুবই শক্তিশালী। আমাদের মানুষরা খুবই শক্তিশালী। আমরা এই ধরনের কোনো হুমকির মুখে পড়ে কোনোভাবেই পিছপা হব না।
২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ বিষয়ে ট্রাম্পের নীতি কট্টর। তাছাড়া কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি ১০০ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি। ট্রাম্প মনে করেন, কানাডার জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক হতে চায়। তিনি বলেন, কানাডার ওপর শুল্কের বোঝা চাপাব। অনেকে কানাডা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করে। কানাডা ৭০টিরও অধিক দেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীসহ সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে মাদক এবং লোকদের ঢুকতে দিয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষা হচ্ছে না। ট্রাম্প আরও বলেন, কনাডার অনেক মানুষ ৫১তম রাজ্য হতে ভালোবাসে। কানাডার এতো পরিমাণ বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভর্তুকি যুক্তরাষ্ট্র আর সহ্য করতে পারে না। জাস্টিন ট্রুডো এটি জেনে পদত্যাগ করেছেন। কানাডার ওপর এত উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হয়, তাহলে সেখানে কোনো কিছু থাকবেন না বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন। শুল্ক, ট্যাক্স অনেক কমে যাবে এবং তারা ক্রমাগত ঘিরে থাকা রাশিয়ান এবং চীনা জাহাজের হুমকি থেকে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে। সবাই মিলে এটি এক মহান জাতি হবে বলে ট্রাম্প মনে করেন। কানাডার নির্বাচনকে সামনে রেখে চালানো জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, কয়েক বছর আগেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ট্রুডো ক্রমেই ভোটারদের আস্থা হারাচ্ছেন। এবার যদি তিনি লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে থাকেন, তাহলে দলটি আগামী নির্বাচনে হেরে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে পরিচালিত জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, কানাডার মাত্র ২২ শতাংশ নাগরিক ট্রুডোর নেতৃত্বে ভরসা রাখেন। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিগত ৯ বছরে ট্রুডোর জনসমর্থন এত হ্রাস পায়নি। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ক্ষমতায় থাকতে অন্যান্য দলের সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল। ২০২১ সালের আগাম নির্বাচনেও লিবারেলরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি। এক জরিপ বলছে, যদি আজই কানাডায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি সহজেই জয়লাভ করবে। জরিপ অনুসারে, কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভ্রে কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। ২০২২ সালে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণের পর ট্রুডোর একজন কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন। তিনি নিজেকে ‘আ্যান্টি-এলিট’ এবং ‘আ্যান্টি-ট্রুডো’ হিসবে উপস্থাপন করেন, যিনি সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন বলে দারি করেন। গত এপ্রিল মাসে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ট্রুডোকে তিনি ‘উন্মাদ’ এবং ‘চরমপন্থি’ বলে অভিহিত করেন। তাঁর এ বক্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাওয়ায় তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কারও করা হয়। বড় বড় প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারা এবং অভিবাসনের মতো বিষয়গুলো সামাল না দিতে পারা নিয়ে ট্রুডোর প্রতি জনগণের হাতাশা ছিল। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া এবং মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্র করে ট্রুডো বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। মানবতা দেখাতে গিয়ে ট্রুডো সিরিয়া, ইউক্রেন, আফগানিস্তান, ইরান, ফিলিস্তিনসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাপক শরণার্থী নিয়ে এসেছিলেন। তারা কানাডার অর্থনীতিতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কানাডায় বর্তমানে বেকারত্বের হার ৬.৮ শতাংশ, যা কোভিডের পর কানাডার সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার। এছাড়া মিত্রদেশের কথা শুনে ইউক্রেনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৯.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন। অর্থের বিশাল ঘাটতি মেটাতে জনগণের ওপর বিভিন্ন ট্রাক্স আরোপ করেছেন; যা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। তবে জাতিসংঘ, জি৭ এবং জি২০-এর মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে তিনি কানাডার অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। ‘জাস্টিন ট্রুডো অন দ্য রোপস’ গ্রন্থের লেখক পল ওয়েলস এ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি বিশ^াস করেন ‘একজন ফলপ্রসূ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ট্রুডো। বিশেষ করে আদিবাসীদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন, জলবায়ু নীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেজন্য তাঁকে স্মরণ করা হবে। তিনি আবার জনমত থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন এবং পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছিলেন না। কোভিড মহামারির সময়ে পরিস্থিতি সামলানো, ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন পূর্বের মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা এবং শিশুদের জন্য সুবিধা ভাতা চালু করেছিলেন। কিন্তু কয়েকটি নৈতিক কেলেঙ্কারির জন্য ট্রুডো সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে শুরু করে।
এদিকে কানাডার সংসদীয় জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কমিটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘কানাডার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়ার জন্য ভারত দ্বিতীয় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিদেশী বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে’। কানাডিয়ান ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস সম্প্রতি একটি তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দেশটির গত দুটি নির্বাচনে চীন প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। ভারত এবং পাকিস্তানও এতে জড়িত থাকতে পারে। এই দুই নির্বাচনেই কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জয়ী হয়েছিলেন। বিদেশী বিপদের তালিকায় চীন এখনো শীর্ষস্থানে রয়েছে। এর আগে দ্বিতীয় স্থানে ছিল রাশিয়া। আর এখন ভারত দ্বিতীয় স্থানে এবং রাশিয়া তৃতীয় স্থানে। ২০২৩ সালের জুন মাসে কানাডা প্রবাসী খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর ভ্যানকুভারে খুন হয়েছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক তলানিতে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর কানাডাও চীনে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। এমনকি চীনের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে কানাডা। কানাডার এমন সিদ্ধান্তের পর চীন কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন হচ্ছে কানাডার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক অংশীদার। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, কানাডার ক্রিয়াকলাপ গুরুতরভাবে বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিয়মকে দুর্বল করে দেয়। কানাডাকে অবিলম্বে এমন ভুল সিদ্ধান্ত শোধরানোর জন্য চীন আহ্বান জানায়। তবে জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে কানাডা শুধু একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়