ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

জনস্বার্থে এসএমসি

প্রকাশিত: ২১:০৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

জনস্বার্থে এসএমসি

.

সুপরিকল্পনা, কর্মদক্ষতা এবং মানুষের কল্যাণের অঙ্গীকারবোধ থাকলে একটি সংস্থা যে বহুদূর যেতে পারে এসএমসি (সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি) তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বর্তমানে এসএমসি এবং ওর স্যালাইন সমার্থক হয়ে উঠেছে। পণ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচয় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অথচ খাবার স্যালাইন হলো এ সংস্থার অন্যতম পণ্য।

বলা দরকার সবচাইতে বিক্রীত পণ্য। বর্তমানে বছরে ১৫০ কোটি ওরাল স্যালাইনের প্যাকেট বিক্রি করে এসএমসি। সংস্থাটির ৫০ বছর পূর্তি অবশ্যই দেশের জন্য একটি গৌরবময় ঘটনা। যার শুরু হয়ছিল ১৯৭৪ সালে। ইউএসআইডি অর্থায়নে পরিবার পরিকল্পনার সোশ্যাল মার্কেটিং প্রজেক্ট হিসেবে এটি যাত্রা শুরু করেছিল। সত্তরের দশকের শেষার্ধে এবং গোটা আশির দশক জুড়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটির পরিচিতি গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকে বলতেই হবে যে, সরকারি নীতির আনুকূল্যে এই সংস্থা দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিল। পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য ব্যবহারযোগ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সে আমলে বেশ সুলভ হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীকালে ১৯৯০ সালে এই প্রকল্পটি অলাভজনক সংস্থায় রূপান্তরিত হয় এবং এর পরিচালনা পর্ষদের সবাই ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক। পরবর্তী ধাপে মাত্র এক দশক আগে এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড নামে লাভজনক সংস্থা গঠন করা হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই চালু হয় এটির ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগ। এটি বাজারে আনে ৩৩টি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট পণ্য। এভাবেই ধাপে ধাপে আসে সফলতা।
বুধবার রাজধানীর এসএমসির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’-এ এসএমসির শীর্ষ কর্মকর্তারা সংস্থা সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরেন। এসএমসির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘পঞ্চাশের উচ্ছ্বাসে, একসঙ্গে আগামীতে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এসএমসির ৫০ বছর পূর্তির লোগোও উন্মোচন করা হয়। সংস্থাটি আগামী দিনে মাতৃ স্বাস্থ্য, কিশোরী স্বাস্থ্য, বাল্যবিবাহ কমানোÑ এসব বিষয়ে জোর দিয়ে কাজ করবে বলে জানায়। এখন ১২০টি উপজেলায় এসব নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটা ঠিক যে, দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারে এসএমসির কোনো না কোনো পণ্য পৌঁছেছে। সারা দেশে আট লাখ স্থান (আউটলেট) থেকে এসএমসির পণ্য বিক্রির জন্য বিতরণ করা হয়। এটি রীতিমতো বিশাল কর্মকা-। এসএমসি ও এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডে বর্তমানে সাড়ে চার হাজার মানুষ কাজ করেন। চারটি কারখানায় এসএমসির পণ্য তৈরি হয়। শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা প্রতিষ্ঠান ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছে।
বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্যের বিপণন ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ দশকে অসামান্য সাফল্য অর্জন করে উদ্যোক্তাদের জন্য অনুসরণযোগ্য হয়ে উঠেছে। দেশের আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী এসএমসি ব্র্যান্ডের গর্ভনিরোধক পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। আশির দশকে ডায়রিয়া ছিল শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এসএমসি নিজ ব্র্যান্ডের ওরস্যালাইন দেশজুড়ে সহজলভ্য করেছে। ফলে ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। বর্তমানে এসএমসি মা, শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। জনস্বার্থে এসএমসির অগ্রযাত্রা প্রত্যাশিত। 

×