ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

শান্তি ফিরুক ফিলিস্তিনে

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

শান্তি ফিরুক ফিলিস্তিনে

.

অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে ধ্বংসযজ্ঞের অসম প্রতিযোগিতায় অসহায় মানবতা। ইসরাইল, ফিলিস্তিন, গাজা, রামাল্লা, হেবরন, তেলআবিব এই শব্দগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শুনতে শুনতে মানুষ ক্লান্ত-শ্রান্ত। সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয়, চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ হোক মরণঘাতী হামলা এবং পাল্টা হামলা। যুদ্ধবিগ্রহ কখনো স্থিতিশীল সমাজ, রাষ্ট্র বিনির্মাণে সহায়ক নয়। দখলদার ইসরাইলিদের আচরণ সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই হিংস্র, আগ্রাসী এবং দানবীয়। আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির উপহার কখনোই যেন মানবতাবিধ্বংসী কামানে পরিণত না হয়। বিশ্ব মানবতার চোখের সামনে একটি জাতির শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবক, আবালবৃদ্ধবনিতা, লৈঙ্গিক পরিচয় নির্বশেষে মারণাস্ত্রের অমানবিক হিং¯্রতায় এভাবে নিঃশেষ হয়ে যাবে তা কোনোভাবেই বিবেকবান কোনো জাতি গোষ্ঠীর কাম্য হতে পারে না। 
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, উনিশ শতকের শেষ দিকে যখন অটোমান নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। যাদের ভৌগোলিক সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সূর্য অস্তাচলে হারিয়ে যেত না কখনো। ব্রিটিশ সরকার ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় সমর্থন জানায়। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট আরব দেশ ফিলিস্তিন ভূখ-ে মিছিলে মিছিলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদিরা আবাসভূমি গড়তে চলে আসে। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টের পর মধ্যপ্রাচ্যে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৪৮ সালে তাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর অসংখ্য ছোট-বড় যুদ্ধ হয়েছে ফিলিস্তিনি ও ইহুদিদের মধ্যে গত ৭৭ বছরে। প্রাণহানি ঘটেছে অসংখ্য মানুষের। অঙ্গহানিসহ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে লাখো মানুষ। 
অন্যদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের দাবানল। মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে যেন আজ বিশ্ব রণাঙ্গনের পাঠশালা। বোদ্ধামহল মনে করছেন, দুটো অসম লড়াইয়ের পেছনে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত। দুনিয়াব্যাপী গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা পশ্চিমাদের দ্বিচারিতার বলি হতে হচ্ছে বিশ্বের প্রান্তিক মানবতার নিরন্ন ও অসহায় মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্লিনকেন বলেছেন, ‘হামাসকে যুদ্ধের ময়দানে পরাজিত করা যায়নি বরং ১৫ মাসে তাদের যত সদস্য নিহত হয়েছে ঠিক সমপরিমাণ সদস্য নতুন যোগ হয়েছে।’ এর দ্বারা প্রমাণিত, পৃথিবীর মজলুম, অসহায় মানুষের ন্যায্য দাবি কখনো গুলি, বোমা, কিংবা ড্রোন হামলা করে দাবিয়ে রাখা যায় না। 
ফিলিস্তিনের গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাস (৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে) ধরে চলা নৃশংস হত্যাকা-ের অবসান হতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হবে। পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। একদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা অন্যদিকে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনার মাঝেও পশ্চিম তীরে শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলী হামলা, এটি দুঃখজনক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে বাইডেন প্রশাসন বলছে, কয়েক মাস ধরে তাদের নিবিড় প্রচেষ্টার ফসল যুদ্ধবিরতি। এই তর্ক অর্থহীন। 
সে যাই হোক, আমরা চাই যুদ্ধ নয়, শান্তির ফল্গুধারায় সমৃদ্ধ হোক পৃথিবী। প্রতিটি দেশের সকল জনপদে জাতি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষ সম্প্রীতি ও পরমতসহিষ্ণুতার ছায়াতলে বাস করবে। বহুত্ববাদী সংস্কৃতির উপস্থিতিতে সরব হবে মানবতার জয়গান। 

×