ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কৌশল ও অভিসন্ধি নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ঘিরে ভারত, চীন এবং আমেরিকার ভূমিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষণীয়। তবে এ মুহূর্তে রাজনৈতিক বিশ্লেষণে সরলীকরণ বা আবেগ নয়, বাস্তব পরিস্থিতি ও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো বোঝা জরুরি।
ভারতের কৌশল: ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা
বর্তমান সময়ে ভারত আওয়ামী লীগকে সরাসরি ক্ষমতায় ফেরাতে সক্রিয় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বরং তারা একটি কৃত্রিম চাপ তৈরি করছে, যাতে শেখ হাসিনার গণহত্যা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মদদদাতা হিসেবে তাদের ভূমিকাটি আড়ালে থাকে। ভারতের মূল কৌশল হলো পরিস্থিতি যেকোনোভাবে স্থিতিশীল রাখা এবং ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করা।
এই ক্ষেত্রে ভারতের জন্য সুবিধাজনক বিষয় হলো, বিএনপি বা যেকোনো নতুন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তারা তাদের কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষা করতে পারবে। তবে ভারতের এই অবস্থান তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতটা কার্যকর হবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
চীনের উদ্বেগ: প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা
বাংলাদেশে চীনের উপস্থিতি মূলত বড় প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চীন প্রচুর স্পিড মানি (প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের অর্থ) দিয়েছে, কিন্তু প্রকল্পগুলোর অনেকাংশই শুরু হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগ করলে লাভজনক পরিস্থিতি থাকবে না। চীনের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশে তাদের কৌশলগত অবস্থান দুর্বল করে তুলতে পারে।
আমেরিকার অসুবিধা: বলয় ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশকে আমেরিকার পুরোপুরি নিজের বলয়ে টেনে আনার প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। কিন্তু দেশটির সেনাবাহিনী এ ধরনের কৌশলে অনীহা দেখিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ তার স্বকীয় অবস্থান ধরে রাখতে পারলে আমেরিকার জন্য এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং জনগণের ক্ষোভকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সম্ভাবনা বেশ জোরালো। বিএনপির হাতে ক্ষমতা যাওয়ার সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি। ছাত্র সমাজের কিছু অংশের এনার্কিস্ট মনোভাব নিজের ভারেই হারিয়ে যেতে পারে।
কৃত্রিম চাপ নয়, সমাধান দরকার
বাংলাদেশের চলমান সংকট কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের চাহিদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে পারবে না।
উপসংহার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে দেশি-বিদেশি জল্পনা-কল্পনা চলতেই থাকবে। তবে বাস্তবতা হলো, জনগণ এখন একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকাও সেই লক্ষ্য পূরণে ইতিবাচক হওয়া জরুরি। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া এবং সমাধানের পথ খোঁজাই হবে বর্তমান সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
জাফরান