ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

অরক্ষিত রেলপথ

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

অরক্ষিত রেলপথ

প্রায়ই গণমাধ্যমে রেলপথে দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়। অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। প্রতিবছর গড়ে রেলে কাটা এবং দুর্ঘটনায় আড়াই হাজার মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। সম্প্রতি রাজধানীর মগবাজার ক্রসিংয়ের প্রাইভেটকার দুমড়ে-মুচড়ে মৃত্যু হয় এক নারীর। গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রেনের ধাক্কায় বাসের ৪ যাত্রী নিহত হন। দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে রেলক্রসিংয়ে ছোট বড় দুর্ঘটনা অহরহ ঘটেই চলেছে। হাজারো কর্মক্ষম মানুষ আহত, নিহত কিংবা মারাত্মক আকারে পঙ্গু হচ্ছেন। ফলে, অযুত সম্ভাবনাময় যুবশক্তি কর্মহীন হয়ে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশে আমলাতন্ত্রের দায়সারা গোছের অপসংস্কৃতি চালু রয়েছে সেই আদিকাল থেকে। এ থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। দেশের অরক্ষিত রেলক্রসিং কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এর বড় প্রমাণ, ৭ জানুয়ারি ফরিদপুরের গেরদা ইউনিয়নের কাফুড়া রেলক্রসিংয়ে ঢাকাগামী ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাস দুমড়ে-মুচড়ে খাদে পড়ে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হন। মৃত্যুর এ মিছিল যেন থামছেই না। কে ধরবে কার লাগাম? আবার কখন, কোথায় বড় দুর্ঘটনা ঘটে! মৃত্যু কিংবা অঙ্গহানির আহাজারি আমরা আর শুনতে চাই না। দায়িত্বজ্ঞানহীন, পশ্চাৎপদ আমলাতান্ত্রিক অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে অবিলম্বে।
কর্তব্যে গাফিলতিজনিত মৃত্যু ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে। তাই এটি সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড। দেশের রেলক্রসিংগুলোর অধিকাংশই প্রায় অরক্ষিত। বৈধ লেবেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কোনো দায় রেল কর্তৃপক্ষ নেয় না। এমনকী আহত কিংবা নিহতের ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারও নিশ্চিত হয় না। বাংলাদেশে মোট রেলপথ ২৮৭৭ কিলোমিটারের মধ্যে রেলক্রসিং রয়েছে ২৮৫৬টি। অনুমোদনহীন ১৩৬১টি। বৈধ ক্রসিং ৬৩২টির গেটম্যান নেই। ২৪২টি গেটে স্থায়ী রক্ষী এবং ৮২০টিতে রয়েছে চুক্তিভিত্তিক। রক্ষীবিহীন ক্রসিং ১৭৯৪টি। ২১৭০টি ক্রসিংয়ে কোনো গেট নেই।
রেলওয়ে এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সড়ক ও জনপথের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের পারস্পরিক ঠেলাঠেলি ও দায়সারা বয়ানে দায়হীনতার সরব উপস্থিতি কখনোই কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে, দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের ঘাম নিঃসৃত শ্রমের উপার্জিত অর্থে প্রদেয় ট্যাক্সের টাকায় কর্তাব্যক্তিদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকঢোল পিটিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আখেরে তা আলোর মুখ দেখে না। দোষীরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে যায়। কঠোর শাস্তি ও জবাবদিহি না থাকায় দায়িত্বহীনতায় আরও বেপরোয়া হয়। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলপথের গুরুত্ব অপরিসীম। যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক নিরাপত্তার সুরক্ষাকল্পে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বিত ও কার্যকরী উদ্যোগই পারে কেবল রেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিমুক্ত একটি নিরাপদ দেশ উপহার দিতে।

×