.
পরিবেশবান্ধব বিধায় এবং দেশীয় কৃষিপণ্য পাটখাত ও পাটের বস্তার ব্যবহার বৃদ্ধিকল্পে বিগত সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে। এ বিষয়ে পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এটি কোনো ব্যবসায়ী মানছেন না। দেশের অধিকাংশ হাট-বাজারে ২৫-৫০ কেজির প্লাস্টিকের বস্তায় দৃষ্টিনন্দন রঙিন মোড়কে প্রায় সবরকম চাল ও অন্যান্য কৃষিপণ্য অবাধে বিক্রি চলছেই। এর পাশাপাশি মোটা চাল মেশিনে পলিশ করে উন্নতমানের চাল হিসেবেও বাজারে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাটের বস্তাজাত কিছু কৃষিপণ্য বাজারে এলেও অধিকাংশই প্লাস্টিকের বস্তা ও প্যাকেটজাত। এতে দেশীয় পণ্য পাটের ব্যবহার বাড়ছে না। ফলে, একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ চলছেই, অন্যদিকে নিরুৎসাহিত হচ্ছে পাটের বস্তার ব্যবহার। এর ফলে, ভোক্তা সাধারণও প্রতারিত হচ্ছেন। ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহারও বাড়ছে। এ বিষয়ে খুচরা ও পাইকারি মিলারদের বক্তব্য, পাটের বস্তার চেয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় খরচ ১১-১২ টাকা কম পড়ে। উপরন্তু পাটের বস্তা সহজেই ছিঁড়ে যায়, বৃষ্টিতে ভেজে। কিন্তু প্লাস্টিকের বস্তা বারবার ব্যবহার করা যায়। ক্রেতাসাধারণও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন পাটের বস্তার চেয়ে, পানি ও বৃষ্টিতে ভিজে যায় না বলে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা স্বার্থ অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একযোগে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে বাঙালির প্রধান খাদ্যপণ্য চালের ওপর প্রায় সব রকম শুল্ককর প্রত্যাহার করা হলেও এর আদৌ কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে জাত ও মান ভেদে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। এর ফলে, খুব কষ্টে আছেন গরিব ও নি¤œআয়ের মানুষ। চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে খুচরা চাল ব্যবসায়ীরাও ক্ষুব্ধ। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-করাদি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে মাত্র দুই শতাংশ অগ্রিম আয়কর ব্যতীত চাল আমদানিতে অন্য কোনো শুল্ক দিতে হয় না। ব্যাংকও কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের হিসেবে, এর ফলে প্রতিকেজি চাল আমদানি ব্যয় ২৫ দশমিক ৪৪ টাকা কমার কথা। ফলে, চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে এবং নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা। পাশাপাশি দেশে আমনের ভরা মৌসুম তো রয়েছেই। যশোর-বেনাপোল দিয়ে আমদানিও হচ্ছে ভারতীয় চাল। তবু অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের দাপটে কমছে না চালের দাম। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের মতে, চাল ব্যবসায়ীদের ফ্রিস্টাইল মনোভাবের কারণে চালের দাম কমছে না কিছুতেই। এমতাবস্থায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নিয়মিত বাজার মনিটরিংসহ কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
মূলত ব্যবসায়ী, কৃষক ও ভোক্তা পর্যায়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও অবৈধ মজুতের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। কৃষক নিজস্ব খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ধান-চাল মজুত করেছেন। দ্বিতীয়ত, বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিসহ আড়তদার ও চাতাল মালিকরা চালের বিপুল মজুত গড়ে তুলেছেন অতি মুনাফার আশায়। তৃতীয়ত, সচ্ছল ভোক্তা শ্রেণিও বেশি পরিমাণে খাদ্যপণ্য কিনছেন দাম বাড়ার আশঙ্কায়। সরকারের চাল ও গমের মজুত সন্তোষজনক। সরকার সবিশেষ জোর দিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। এই পরিস্থিতিতে রমজানকে সামনে রেখে আমদানিকারকসহ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের উচিত দেশের জনগণের স্বার্থে সরকারকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে চালের দাম যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে রাখা।