ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১

স্মৃতির আয়নায় মিজানুর রহমান খান

খালিদ ইবনে আমিন

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

স্মৃতির আয়নায় মিজানুর রহমান খান

অনন্ত পথের অন্তিম গন্তব্যে, অধ্যয়নে আলোর মশাল, মিজানুর রহমান খান ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বহুকাল জ্ঞানপিপাষু মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। আইন সাংবাদিকতায় সাধনা ও অধ্যবসায়ে আকাশচুম্বী সাফল্যে যে শৈল্পিক আবহ তৈরি করেছেন তিনি, তার দীপ্তিময় প্রভায় আলোকিত হবে ধরালোক। আইনি জ্ঞান-গবেষণার অনন্য নজির তিনি। ব্যাপক চর্চা, গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণাধর্মী লেখনীর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকতাকে অসীম উচ্চতায় নিয়েছেন। খুব অল্প সময়ে দেশের আইনে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন। আইনের নিরস বিষয়গুলোর জটিল তত্ত্বের বিষয় সহজ-সরল, সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় সর্বশ্রেণির পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন প্রাজ্ঞতায়। দেশের সংবিধান ও বিচারিক ব্যবস্থার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভুল-ত্রুটিসহ অসংলগ্ন বিষয়গুলোর আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন মুন্সিয়ানার সঙ্গে। শুধু দেশের গণ্ডিতেই তিনি সীমাবদ্ধ ছিলেন না, আইনি যুক্তি উপস্থাপনায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থা অধ্যয়ন করে দেশের চিন্তাশীল অভিজাত শ্রেণির পাঠকের কাছে সহজ-সরল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। তিনি ছিলেন অসংখ্য সাড়া জাগানো প্রতিবেদনের রূপকার। সচিবালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছিল তার বিশ্বস্ত নিউজ সোর্স। পাঠকের হৃদয়পটে প্রবেশ করতে তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় মহাফেজখানা থেকে বের করে আনতেন ইতিহাসের বর্ণিল অজানা অধ্যায়গুলো। যখন দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের একটি বড় অংশ নগদ প্রাপ্তির আশায় পলিটিক্যাল টার্ন নেন, তখন মিজানুর রহমান খান শিকড় সন্ধানী হয়ে ইতিহাসের অলি-গলিপথ মাড়িয়ে হেঁটে চলেছেন। নিরন্তর প্রচেষ্টায় আলোর বিচ্ছুরণ খোঁজেন জাতিকে নতুন পথ দেখাতে। বরিশালের বিএম কলেজে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স করা একজন ছাত্র  কতটা সুগভীর অধ্যয়ন করলে অসাধারণ হতে পারেন তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত তিনি।
একজন সাংবাদিকের আত্ম-অধ্যয়ন কতটা উচ্চতায় গেলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাবেক প্রধান বিচারপতিও সমীহ করে কথা বলেন, ‘মিজান কী বলে’ শুনি। কথনে-বলনে, লেখনে সাবলীল ও বিশ্লেষণী ক্ষমতায় অতি পারঙ্গম, প্রজ্ঞাবান মিজানুর রহমান খানের রচিত গ্রন্থগুলো জ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠককে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর। সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি ও সরকার পরিচালনা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করবে বারবার। তার কর্ম ও লেখনীর মাঝে তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল। জ্ঞানমুখী চিন্তাশীল সাংবাদিকদের জন্য তিনি আইকন হিসেবে সময়ের স্রোতে ভেসে উঠবেন বারবার। জড়বাদী-বস্তুবাদীদের ধ্যান-জ্ঞান কেবলই ধরিত্রীর লোভ-লালসায় মিশ্রিত আলো-বাতাস কেন্দ্রিক। তিনি অনন্ত জীবনে বিশ্বাসী ছিলেন। কখনোই এপারের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে ওপারের সীমাহীন জীবনের ওপর অগ্রাধিকার দেননি। জাতিকে কালজয়ী কিছু বই উপহার দিয়েছেন তিনি। এক. সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক। দুই. বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের স্বরূপ। তিন. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এক অশনি সংকেত। চার. আইন আদালত সংবিধান : নির্বাচিত লেখালেখি। পাঁচ. ১৯৭১ : আমেরিকার গোপন দলিল। ছয়. মার্কিন দলিলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। সাত. মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড। আট. মার্কিন দলিলে জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড। নয়. মার্কিন দলিলে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যাকাণ্ড। দশ. জেনারেল জ্যাকবের মুখোমুখি।
প্রায় চার দশকের সাংবাদিকতা জীবনের অভিষেক হয় (১৯৮৫-১৯৮৯) বরিশাল থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল’-এ। জাতীয় দৈনিক নিউ নেশন, বাংলাবাজার, মুক্তকণ্ঠ, যুগান্তর, সমকাল ও প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। ২০০৪ সালের কথা, দৈনিক সমকাল পত্রিকা ডামি বের করার প্রস্তুতি চলছে তেজগাঁওয়ের নতুন অফিসে। একদিন দুপুরে গেলাম সমকালে, দেখা হলো মিজানুর রহমান খানের সঙ্গে। পরিচয় পর্ব শেষে জানতে চাইলেন আগ্রহের বিষয়, জানালাম পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন। যে বিষয় নিয়ে কাজ করবেন তার একটি প্রস্তাবনা দিন। পরের দিন নেমে পরলাম। ঢাকার এক পুরনো পত্রিকা অফিসে কর্মরত এক সাংবাদিক বন্ধুর সহযোগিতায় সম্পাদক সাহেবের বিশেষ অনুমতি নিয়ে, পঞ্চাশ বছরের মধ্যবয়সী আর্কাইভের তথ্য সাগরে সাঁতার কাটা শুরু।  এক সপ্তাহের অধ্যয়নে ১০ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাবনা নিয়ে পরের দিন হাজির হলাম। তিনি গভীর মনোযোগে দেখলেন এবং বললেন,  ‘সি লেভেল রাইজ’ নিয়ে কাজ করেন। বাংলাদেশের উপকূলের অবস্থা কেমন হবে আগামী দিনগুলোতে, অনুসন্ধান করুন। নেমে পড়লাম অনুসন্ধানে। সাক্ষাৎকার নিলাম স্পার্সোর সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, খ্যাতিমান পদার্থ বিজ্ঞানী ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদের। তাকে যখন বলেছি আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই, তিনি তখন আমাকে শিশুর মতো করে পরম মমতায় জলবায়ু বিজ্ঞানের অ-আ-ক-খ পড়ালেন প্রায় তিন ঘণ্টার মতো।
এরপর সুযোগ হলো ড. ডিএ কাদির, (চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল ওসানোগ্রাফি অ্যান্ড ম্যারিটাইম ইন্সটিটিউশন) তিনিও হাতে কলমে সমুদ্র তলদেশের মৌলিক বিষয়গুলো শিশুতোষ করে দারুণ বোঝালেন ঘণ্টাদেড়েক। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার, বাংলাদেশের সম্মুখ ও আভ্যন্তরীণ উপকূল  সম্পর্কে কাগজে-কলমে হাতে ধরে শেখালেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের সিনিয়র অধ্যাপক  ড. আব্দুর রব স্যার। দেশের হাইপ্রফাইল এক্সপার্টদের সাক্ষাৎকার শেষে দুই মাস ১০ দিন পর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সমকালে গেলে মিজান ভাই বললেন, ‘বাংলাদেশ কী থাকবে নাকি ডুবে যাবে?’ আমার মতো করে জবাব দিয়েছি, তিনি মুচকি হাসলেন। সময়ের জল গড়িয়েছে দূর বহুদূর। সেই থেকে চলছি আজও। জলবায়ু ও দুর্যোগ গবেষণা এবং আইনের একজন সামান্য ছাত্র হিসেবে এই পুঁজি নিয়েই চলছি দুই দশক, যা মিজান ভাইয়ের উৎসাহের ফসল।
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিটিউটে ২০০৮ সালে সাংবাদিকতায় পিজিডি করাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক  ও পত্রিকার সম্পাদকদের ক্লাসে যখন ছাত্রদের উপস্থিতি নগণ্য, তখন তার ক্লাসে উপচে পড়া অবস্থা, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে সবাই। একজন মানুষের পক্ষে দেশ-বিদেশের আইনের এত বিস্তর জানা কী করে সম্ভব? এই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন মিজানুর রহমান খান, যার তুলনা তিনি নিজেই। জনপ্রিয় শিক্ষক, বাগ্মিতায় ঐশ্বরিক শক্তিমত্তায় সমৃদ্ধ। টেলিভিশন টকশ’, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, কিংবা রাউন্ড টেবিল বৈঠকে। সর্বত্রই আকর্ষণীয় বর্ণিলতায় সমৃদ্ধ, যা অমনোযোগী, উদাসীন, মনভোলা স্রোতাকেও আকর্ষণ করে চুম্বকের মতো। সবারই দৃষ্টি  মিজান কী বলে? মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শুনে নেয় সকল কথা। এই হলো আমাদের মিজানুর রহমান খান। বাংলাদেশে বেশ ক’বছর আগে দেশের বৃহৎ একটি শিল্প গ্রুপের অফিসে নারীঘটিত বিষয়ে মালিক তনয় কর্তৃক এক কর্মকর্তা খুন হন। নিম্ন আদালতে আসামির ফাঁসির রায় হলেও উচ্চ আদালতে স্থগিত/রহিত হয় (যতটুকু মনে পড়ে)।  উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। লেখেন আইনি পর্যালোচনামূলক যুক্তি-তথ্যে সমৃদ্ধ কলাম। যতটুকু মনে পড়ে এ কলাম লেখার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তাকে কোর্টে তলব করেছিলেন এবং তার যুক্তিগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। এছাড়া আইনের রথী-মহারথীগণ বিভিন্ন সময়ে তার কাছ থেকে আইনি পরামর্শ নিতেন।
আলোচিত সেই প্রতিবেদন ও কলাম লেখার পর দেশের ঐ শিল্প গ্রুপ ৭টি প্রতিষ্ঠানের বিশাল  মিডিয়া গ্রুপ নিয়ে আসে। বাজারে জনশ্রুতি আছে, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেই তারা এ পদক্ষেপ নেয়। আসলে এর নেপথ্যের মহানায়ক ছিলেন মিজানুর রহমান খান। তার কলমকে অনুকূলে আনতে অনেক লোভনীয় সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি নৈতিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হন। বিবেকের কাছে পরাজিত হননি। পারিবারিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ তাকে ক্ষয়িঞ্চু সমাজের বাস্তবতায়ও অন্যদের থেকে অগ্রগামী রেখেছে। তার কলম প্রতিহত করতেই পাল্টা কলমের প্রতিস্থাপন। হয়তো অনেক পাঠকই তা জানেন না। তিনি তরুণদের সঙ্গে কাজ করতে খুব পছন্দ করতেন। তরুণদের খুব ভালোবাসতেন। তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। চিন্তা উৎপাদনের কারিগর, তারুণ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা মিজানুর রহমান খান আজ ঊর্ধ্বলোকে।  
২০১৮ সালের শুরুর দিকে, কোনো একদিন মোবাইল কলে ‘খালিদ, অফিসে একটু আসতে পারবেন? জরুরি কিছু কথা আছে।’ গুরুজনের কথা শিরোধার্য। পরদিন বিকেলে গেলাম, শুরু করলেন  ২০১৭ সালে রাশিয়া সফরের ইতিবৃত্ত। প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে মুসলিম বিশ্বের সাংবাদিকদের এক সম্মেলনে অতিথি হিসেবে গমন, বক্তৃতাদান এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক লেকচার, যা একজন  তথ্যজীবী সংবাদকর্মীর জন্য অত্যন্ত সম্মানের। বললেন ২০১৮ সালেও আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ‘খালিদ আমাকে কিছু টেক্সট দেবেন’ বাংলাদেশে সূফীদের আগমন, বিস্তার, দেশের নানা প্রান্তে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচারে তাঁদের কর্মকৌশল, প্রজ্ঞা, মেধা ও মননশীলতার। আমি রীতিমতো হতবাক, আমার মতো অতি ক্ষুদ্র নগণ্য এক ছাত্রের কাছে জ্ঞানের এই বিশাল মহীরূহ তথ্য চাচ্ছেন। তার বিনয়বোধ আমাকে ভাবিয়েছে এবং তথ্য সংগ্রহে উৎসাহ যুগিয়েছে। মিজান ভাইকে জানিয়েছি আমার ব্যাক্তিগত লাইব্রেরীতে প্রায় ৪০০ একাডেমিক জার্নাল রয়েছে। সেখান থেকে ঘেটে বের করে আপনার জন্য কিছু নিয়ে আসবো। দশদিন সময় নিয়ে দুটি জার্নাল ও কিছু বইয়ের ফটোকপি নিয়ে হাজির হলাম। মিজান ভাই দেখে খুব খুশি হলেন। বললেন ‘খালিদ কেউ পড়তে চায়না, জ্ঞানমুখী হতে চায়না। খালিদ পড়েন, বেশি বেশি পড়েন। জ্ঞানই মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে।’
আজও কানে বাজে তাঁর কথার অন্তর্নিহিত দর্শন। পরম শ্রদ্ধাষ্পদ মিজান ভাই আপনার কথা রেখেছি। প্রতিদিনই অল্প অল্প পড়ি, যতই পড়ি নিজকে নতুন মাত্রায় জানি, নিজের অজ্ঞতার গভীরতা ততবেশি দৃশ্যমান হয়। নিজেকে চিন্তার জগতে খুব অসহায় মনে হয়। এতো জানাশোনা একজন মানুষ নিজেকে কতটা সাধারণ করে তুলে ধরেন। জ্ঞানের কোনো অহংকার নেই, দম্ভ নেই, একদম মাটির মানুষ যাকে বলে। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের সম্ভবত প্রথম দিক। বাংলাদেশে অনেক মুসলিম পন্ডিত ধর্ম প্রচার করেন, কিন্তু রিলজিয়াস ল’কে পশ্চিমা আধুনিক ল’এর মোকাবেলায় উপস্থাপন করার যোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান খুব একটা দৃশ্যমান নয়। বেসরকারি পর্যায়ে ইসলামী আইনের আধুনিক রূপ-পরিগ্রহ নিয়ে একমাত্র কাজ করে বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ এন্ড লিগাল এইড সেন্টার, ঢাকা। এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী সম্পাদক শহিদুল ইসলাম একদিন অনুরোধ করলেন, আমাদের প্রকাশনাসহ মিজান ভাইর সাথে একটু সাক্ষাত করতে চাই, ব্যবস্থা করেন। দু’দিন পর মিজান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাতের অনুমতি পেলাম। বেশ ক’টি জার্নাল ও সিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ রাশেদ আল উমর কর্তৃক আরবি ভাষায় রচিত ‘ইসলামে কারা বিধান’ (ডেমো অনুবাদ) নিয়ে হাজির হলাম। তাদের প্রকাশনা দেখে মিজান ভাই যথেষ্ট উৎফুল্ল। হাতে সম্পাদকীয় লেখার কাজ থাকায় বিনয়ের সাথে ক্ষমা চেয়ে কিছু সময় নিলেন। চা পর্বের সাথে প্রায় ঘণ্টাতিনেক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আইন ও তার প্যারালাল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় আমাদের মাঝে।
নিত্য নতুন চিন্তা তাঁর মাথায়, ইসলামিক জুরিসপ্রুডিন্স নিয়েও তাঁর আগ্রহের কমতি নেই। বিদায় নেয়ার সময় জানালেন, ‘উপরোক্ত গ্রন্থের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেবেন, আমি যাবো। আপনাদের নতুন কোন প্রকাশনা এলে আমাকে দেবেন, পড়বো।’ কে জানতো মিজান ভাইয়ের সঙ্গে এ দেখাই আমাদের শেষ দেখা। কেউ কি জানে ভবিষ্যতের কথা?
যতটুকো জানি, প্রায় চার  দশকের সাংবাদিকতা জীবনে স্থাবর-অস্থাবর কোনো সম্পদ রেখে যাননি মিজান ভাই। স্ত্রী-সন্তান, মা, ভাই-বোন, বন্ধু-সুহৃদদের কছে শুধু রেখে গেছেন এক জবাবদিহি মূলক আত্মিক আদর্শ, যার নাম শুধুই সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। হে পরওয়ার দেগার আল্লাহ সুবহানাহু অতা’য়ালা ক্বিয়ামতের সেই কঠিন ময়দানে যখন কোনো ছায়া থাকবে না, মা’বুদ তমি তোমার এই সৎ বান্দাকে শুধু সততার জন্য ক্ষমা করে দিও। যতটুকু জানি তিনি কারো ক্ষতি করেননি কোনো দিন। তাঁর ওপর তোমার রহমতের চাদর দিয়ে ঢেকে দিও, তাঁকে রহমত প্রাপ্তদের দলভুক্ত করো।
লেখক : সাংবাদিক

×