বাঙালি জাতির মধ্যে যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য বেশি। যে কারণে কোনো একটি বিষয়ে বাঙালি কখনো একমত হতে পারে না। বরং বলা যায়, যত ব্যক্তি তত মত ও পথ। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভিন্নমত বা মতপার্থক্য থাকবেই। এটি দোষের কিছু নয়। কিন্তু যৌক্তিক কোনো বিষয়ে একমত পোষণ না করাটা দুঃখজনক। এ যেন অনেকটা ‘কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমান’। ফলে, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, তর্ক-বিতর্ক, হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি ইত্যাদি লেগেই আছে। যা অনেক সময় গড়ায় প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মাধ্যমে। বিষয়টি এমনকি ভাই-ভাই, পিতা-পুত্রের মধ্যেও দেখা যায়। অনেক সময় পৈত্রিক সম্পত্তি অথবা জমিজমা নিয়ে যুক্তিসংগত কোনো মীমাংসায় পৌঁছানো সম্ভব না হলে বিষয়টি গড়ায় গ্রাম্য সালিশ এবং সেখানেও সমঝোতা না হলে আদালত পর্যন্ত। এ থেকে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষসহ খুনাখুনি পর্যন্ত বাদ যায় না অনেক ক্ষেত্রে। যে কারণে দেশে এবং বিদেশেও বাঙালি জাতির আদৌ কোনো ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠতে পারছে না।
শনিবার সেন্টার ফর নন রেসিডেন্স বাংলাদেশী আয়োজিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বাঙালির সেই চিরায়ত স্বভাবের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। একই অনুষ্ঠানে ব্যাংক রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ডও প্রদান করা হয়। উদাহরণ দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল। এগুলোর মধ্যে তিনটি যেমন- আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ জাতীয় পার্টি যথেষ্ট বড়। কোনো দলের শাখা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিব্যাপ্ত। সেসব স্থানেও একাধিক দল-উপদল রয়েছে। বাস্তবে কেউ কাউকে দেখতে পারে না। বরং রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাজনৈতিক নেতা বিদেশ সফরে গেলে একজন প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রদর্শন এমনকি ‘দুয়ো’ ধ্বনি দেয়। অনেক ক্ষেত্রে যা পর্যবসিত হয় দলীয় কোন্দলে, যা কারও কাম্য নয় কোনো অবস্থাতেই। এমন অবস্থায় বিদেশে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠতে পারে না। বিদেশীরা বরং কিছু ক্ষেত্রে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ও বাঙালিকে হেয় প্রতিপন্ন করে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি বিবেচনায় বিনিয়োগ করতে আসে না বাংলাদেশে।
যত দ্রুত সম্ভব এই দুরবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। দেশে যে যে দলই করুক না কেন মতপার্থক্য ভুলে বিদেশে সবাইকে একযোগে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে বিদেশের মাটিতে- সে দেশের জনগণ ও সরকারের কাছে। এর জন্য পরস্পর সখ্য, সৌভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে নিজেদের কমিউনিটির মধ্যে। ব্যক্তি বা দলভিত্তিক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে একমত পোষণ করতে হবে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে। প্রয়োজনে সে দেশের স্থানীয় কমিউনিটি ও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হবে। যেমনÑ কিছু ক্ষেত্রে হয়েছে যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হেমলেটসে। এর ফলে, সেদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এরকম হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশেও। তাতে সেসব দেশে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠবে। বিদেশী ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন বাংলাদেশে। এর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মধ্যে পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ব, দলমত নির্বিশেষে স্বাজাত্যবোধে উদ্বুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যার কোনো বিকল্প নেই।
ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ
শীর্ষ সংবাদ: