ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস। মাইলের পর মাইল এলাকায় গাছপালা, বসতবাড়িসহ যাবতীয় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এতে ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে ১১ জনের। ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে আরও দুই লাখ মানুষকে। ১০ হাজারের বেশি স্থাপনা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। মনুষ্যসৃষ্ট হোক, কিংবা প্রাকৃতিকই হোক, দুর্যোগে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটে। এ সময়ে মানবিকতাই বেশি কাম্য। মানুষের পাশে এসে মানুষ দাঁড়াবে, দেশের পাশে দেশ- এটাই প্রত্যাশিত। যেমন- আমেরিকার সাম্প্রতিক দাবানলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র কানাডা পাশে থাকার কথা বলেছে। দুর্যোগ দুর্যোগই, এর সঙ্গে অভিশাপের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষই দাবানলকে ‘পাপের শাস্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। দুঃখজনক হলো, যখন এলাকাবাসী একজন অন্যজনের সহায়তায় এগিয়ে আসে, সে সময়ে এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত মেতেছে লুটতরাজে। এর জেরে অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পুলিশপ্রধান নৈশকালীন কারফিউ জারির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে সান্তা মনিকা শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারফিউ জারি করাও হয়েছে।
চলমান দাবানল মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দাবানলের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। আনুমানিক ক্ষতি ধরা হচ্ছে ১৩৫ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যারাডাইসে যে দাবানল হয়েছিল, তাতে সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাবানলের ঘটনাগুলোর একটি ঘটেছিল। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন পাওয়ার কোম্পানির বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের স্ফুলিঙ্গ থেকে সূত্রপাত হয়েছিল দাবানলের। তদন্তকারীরা তখন বলেছিলেন, প্রচণ্ড বাতাসের মধ্যে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ হলে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। বজ্রপাত, অগ্নিসংযোগ, বৈদ্যুতিক লাইন ছাড়াও অনেক সময় আবর্জনা পোড়ানো এবং আতশবাজি ফোটানো থেকেও দাবানলের সূত্রপাত হতে পারে। তা ছাড়াও দুর্ঘটনায় অসংখ্য উৎস থেকেই আগুন ছড়াতে পারে। বিবিসি সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে এক দম্পতি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনে বেশি ধোঁয়া তৈরি করে এমন বিশেষ ধরনের আতশবাজি পোড়াতে গেলে বড় আকারে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন প্রায় ৩৬ বর্গমাইল এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। এতে ৫টি বাড়ি এবং আরও ১৫টি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনায় এক অগ্নিনির্বাপণকর্মী প্রাণ হারান।
লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় সম্ভাব্য কারণগুলো খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পাহাড়ি প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকায় জেমি লি কার্টিস ও বিলি ক্রিস্টালের মতো হলিউড তারকাদের বাড়ি। দাবানলে তাঁদের ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্যাসিফিক প্যালিসেইডসের পিয়েডরা মোরাডা ড্রাইভ এলাকার একটি বাড়ির পেছনে ঝড়ো বাতাসে সূত্রপাত হয়েছে দাবানলের।
ভয়াবহ দাবানলের কারণ বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই। মানুষের অপরিণামদর্শিতার জন্য আগুন লাগা এবং শুষ্ক ও ঝড়ো বাতাসের কারণে সেটি বিপুল আকারে ছড়িয়ে পড়ার নজির তো রয়েছেই। মানুষ এ থেকে শিক্ষা নেবে এবং বিশে^র অন্যতম ক্ষমতাশালী দেশটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও সফল হয়ে উঠবে- এমনটাই প্রত্যাশা। কিন্তু দুর্যোগে মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে যেসব দুর্জন লুটতরাজে মেতে ওঠে, তাদের থামাতে হবে। সেইসঙ্গে মার্কিন সমাজে এ জাতীয় মানসিকতার যাতে বিকাশ না ঘটে, সে বিষয়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের সহায়তায় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, সেটিও প্রত্যাশিত।
দাবানল ॥ দুর্যোগে দুর্জন
শীর্ষ সংবাদ: