খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে কোনো দেশের সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সম্প্রতি খাদ্যশস্যের সরকারি মজুতের পরিমাণ ১২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। এর মধ্যে চাল প্রায় ৮ লাখ টন, বাকিটা গম। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৬ লাখ টন চাল-গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চাল ও গম আসার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও আর্জেন্টিনা থেকে আসবে এসব খাদ্যশস্য। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সরকারের মজুতের বড় একটি অংশ আসে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান ও চাল কেনার মাধ্যমে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি হওয়ায় সরকার কাক্সিক্ষত মাত্রায় তা কিনতে পারছে না। দৈনিক সংগ্রহ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোনো কোনো জেলা/উপজেলা/কেন্দ্রে এখনো সংগ্রহের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। কোনো কোনো কেন্দ্রে এখনো সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়নি, যা অনাকাক্সিক্ষত এবং অনভিপ্রেত। এসব স্থাপনায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাযথভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন বলে প্রতীয়মান হয় না। অবশ্য এ অবস্থায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহের জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে চুক্তি না করা এবং চুক্তি করে চাল সরবরাহ না করা মিলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, যারা সরকারকে সহযোগিতা করবে না, আর যারা সরকারকে চাল দেবে- দুজনের সঙ্গে আচরণ একরকম হবে না।
দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এরই মধ্যে সরকার চাল আমদানিতে প্রায় সব শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কৃষকের উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা, নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা, প্রয়োজনে ত্রাণ বিতরণ, স্বল্পআয়ের মানুষের মধ্যে খোলাবাজারে এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ নানা চ্যানেলে চাল সরবরাহের কারণে সরকারিভাবে সন্তোষজনক খাদ্যশস্য মজুত রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি এবং বন্যা ও খরার মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগপরবর্তী আপৎকালীন খাদ্যশস্য চাহিদা পূরণে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য মজুতের গুরুত্ব অপরিসীম। সেক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানি করাই যুক্তিযুক্ত।
যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বেই যুদ্ধ-বিগ্রহসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগ্রাসন বেশি, সেহেতু খাদ্য নিরাপত্তার বৃহত্তর স্বার্থে সরকারিভাবে আপৎকালীন খাদ্য মজুত বাড়ানো উচিত। তা না হলে খাদ্যশস্যের বাজার সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। পরিণামে সাধারণ ভোক্তাকে বেশি দামে খাদ্যশস্য কিনে খেতে হবে। অপ্রিয় হলেও সত্য, যখন খাদ্যশস্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার অসহায় হয়ে পড়ে, তখন সুযোগসন্ধানী অনেকেই এর সুযোগ নিয়ে বিত্তের পাহাড় গড়ে তোলে। ফলে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। মানুষের ক্ষুধার জ্বালা নিবারণে সরকারের সঠিক ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। তা না হলে সাধারণ ভোক্তার কষ্ট লাঘব চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।
খাদ্যশস্য মজুত
শীর্ষ সংবাদ: