প্রাচীনকাল থেকে মানুষের বিনোদনের ধরন পরিবর্তিত হলেও এর প্রয়োজনীয়তা কখনো কমেনি। কিন্তু আধুনিক যুগে সুস্থ বিনোদনের ধারণা অনেকটাই বিকৃত হয়ে পরেছে। প্রাচিনকালে বিনোদনের অংশ ছিল অনেকটা সামাজিক, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক নির্ভরশীল। যেমন; নাচ,গান, কাব্য পাঠ,লোকউৎসব, হস্তশিল্প, ধর্মীয় আচার, পাঁজল ও ধাধা ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানকে প্রত্যক্ষ করলে আমরা দেখি যে, বিনোদনকে আমরা এককেন্দ্রিক করে ফেলেছি ( ইন্টারনেট ভিত্তিক)। যেখানে বিনোদনের নামে হাজারো কন্টেন্ট বা রিলস থাকে অশ্লীললতা যুক্ত যার ফলে কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত বিনোদনের নামে যা দেখছে তা মানসিক ও শারীরিক ভাবে বিকাশ না করে বরং শরীর এবং মনে খারাপ প্রভাব ফেলছে। কোয়ান্টাম মেথডের একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিশুরা কার্টুন দেখেই বেশিরভাগ সময় ব্যায় করে। কিন্তু অনেক কার্টুনেই হিংসাত্মক ঘটনা দেখানো হয় যা তাদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাছাড়াও কিশোররা বিনোদনের নামে ফ্রি- ফায়ার এবং পাবজি এই জাতীয় গেইম খেলে মানুষ মারার এক ধরনের ভার্চুয়াল ট্রেনিং পাচ্ছে পাশাপাশি তারা বেশ ভালোই আনন্দিত ও পুলকিত হচ্ছে। কিন্ত এর বদৌলতে পরবর্তীতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাবও পরছে। যেমন : ব্রাজিলে এক ডাক্তারি পড়া ছেলে গুলি করে তিনজনকে হত্যা করেছে। জানা যায় 'ডিওক নুকেম' নামক গেইম খেলে মানুষ মারার জন্য উৎসাহিত হয়েছিল সে। কিন্তু বিনোদন শুধু ইন্টারনেট ভিত্তিক নয় অর্থাৎ ইউটিউব, ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম, টুইটার আর ভিডিও গেইম কিংবা কার্টুনকে কেন্দ্র করে হতে পারেনা। বিনোদন যে হতে পারে বহুকেন্দ্রিক এটা আমরা প্রায় ভুলেই বসেছি। যেমন:শারীরিক বিনোদন অর্থাৎ খেলা-ধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদি করা। খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের 'ইমিউন সিস্টেম' শক্তিশালী হয়, পারস্পারিক মেলবন্ধন ও মানসিক স্ট্রেস কমায় । সৃজনশীল বিনোদন; ক্যালোগ্রাফি, সঙ্গিত, লেখালেখি, আর্ট ও বই পড়া ইত্যাদি।এগুলার মধ্যে দিয়ে মানুষের 'ডোপামিন নিঃসরণ' হয় পাশাপাশি 'নিউরো প্লাসটিসিটি' বৃদ্ধি পায় (নিজেকে গঠন করা বা পরিবর্তন করার ক্ষমতা) ।
সামাজিক বিনোদন হিসেবে ধরা যেতে পারে পারিবারিক আড্ডা, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো ইত্যাদি। এসবের মধ্যে দিয়ে 'নিউরাল নেটওয়ার্ক 'সক্রিয় থাকে। এটি মানুষের চিন্তাশক্তি এবং সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা উন্নত করে। এবং 'নিউরো ট্রান্সমিটার বৃদ্ধি' করে । এটি আনন্দদায়ক সামাজিক কার্যকলাপ মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা ভালো অনুভ‚তির সঙ্গে যুক্ত।। এসব বিনোদন আমাদের আত্মবিশ্বাস, সুখানুভ‚তি, শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ঠিক একই ভাবে যদি আমরা ইন্টারনেটের ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যাবহার করতে পারি তাহলে ইন্টারনেটও হয়ে উঠবে আমাদের সুস্থ বিনোদনের প্লাটফর্ম যেমন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নেয়া, পেইন্টিং করার ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির সাহায্য নেয়া কিংবা যেসব সিনেমা বা কার্টুন ইতিবাচক ঘটনা তুলে ধরে সেসব কার্টুন বা সিনেমা দেখা। এভাবে ভালো কাজে ইন্টারনেটকে ব্যাবহার করে সুস্থ বিনোদন পেতে পারি। এই সুস্থ বিনোদন শুধু নিজেকেই সতেজ রাখেনা বরং পরিবার থেকে সমাজে শৃঙ্খলা ও শান্তি বয়ে নিয়ে আসে। তাই আজ থেকেই শুরু হোক আমাদের সুস্থ বিনোদনের চর্চা।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়