শীতের মৌসুম আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। শীতের দিনে পরিবেশ থাকে অনেক বেশি ফুরফুরে। এই সময় বাংলাদেশের কতিপয় মানুষের জন্য আরামদায়ক হলেও বেশিরভাগ মানুষের জন্য তা দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগের। শীতের আমেজটা দেশের আভিজাত্যদের জন্য স্বস্তিদায়ক হয়। এই সময়ে তারা নিজেদের উষ্ণতায় রেখে আত্মতৃপ্তি অনুভব করে। কিন্তু যারা পথশিশু, দারিদ্র্য, নিঃস্ব, অসহায় তাদের এই সময়টা পার করতে হয় অনেক কষ্ট ও যাতনার মধ্য দিয়ে। শীতের মৌসুমে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। প্রকৃতি থাকে অন্য মৌসুম থেকে ভিন্ন। সবাই উষ্ণতাকে বরণ করে নেয়। কেউ বা সকাল সকাল খড় পুড়িয়ে আগুনের কাছে যায় কিছুটা আরাম পাওয়ার আশায়। এই সময় ব্যাটমিন্টন আমাদের জন্য হয়ে ওঠে একটি প্রিয় খেলা। কুয়াশামাখা দিনে কেউ কাউকে দেখবে তো দূরের কথা কুয়াশা ছাড়া স্পষ্ট কিছু দেখাও যায় না। প্রকৃতির মধ্যে একরকম সৌন্দর্য বিরাজ করে। তবে যাদের গরম বস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের কাছে এই সময়টা হয়ে ওঠে অনেক বেশি দুর্বিষহ।
শীতের এই মৌসুমে সব থেকে বেশি ভোগে পথশিশুরা। পথশিশুরা আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। তাদের দায়ভার আমাদেরই নিতে হবে। কিন্তু তারা আজকাল সমাজের কাছে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাদের শয্যার, আশ্রয়ের জায়গা হয় রাস্তার কোনো এক কোনায়। শীতের মৌসুমে তাদের অবস্থা হয় অনেকটা করুণ ও দুঃসহনীয়। যেখানে একবেলা খাওয়া তাদের কাছে বড় লড়াইয়ের জায়গা, সেখানে শীতের উষ্ণ কাপড় কেনা তাদের জন্য বিলাসিতা। শীতের কুয়াশামাখা রাতে তারা কাতরাতে থাকে। আবার অনেকে শীত সহ্য করতে না পেরে অকালে মৃত্যুবরণ করে। রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব হলো তাদের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের দিকে ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে দেওয়া। শীতের সময়টা পার করতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় বৃদ্ধদেরও। তারা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। অনেক বেশি শীতের কারণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, যা আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। শীতের মৌসুমটা একদিকে যেমন আরামদায়ক, অন্যদিকে হয় কষ্টেরও।
শীত এলে আমরা পাখিদের আওয়াজ শুনতে পাই। যাকে আমরা অতিথি পাখি বলে সম্বোধন করি। অতিথি পাখিরা সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসে কম তাপমাত্রার শীতার্ত দেশগুলোতে। যাতে নিজেদের জীবন রক্ষা করতে পারে। আর আমাদের সমাজের পরম ধর্মই হলো পরিবারে অতিথি এলে সঠিকভাবে আপ্যায়ন ও পরিচর্যা করা। যাতে পরিবারের মানসম্মান হানি না হয়। তবে অতিথি পাখিরা অতিথি হওয়া সত্ত্বেও তাদের আপ্যায়ন তো দূরের কথা, বরং শিকার করতে মরিয়া হয়ে ওঠে দেশের শিকারিরা। আবার তাদের প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটে। যা খুবই দুঃখজনক।
শীতে পথশিশুদের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ, খাদ্য বিতরণ, নিরাপদ আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা ও পড়ালেখার সুযোগ তৈরি করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু দেশটি এখনো ছিন্নমূল মানুষের হতে পারেনি। ফলে, এ দায়িত্ব নিতে হবে আমাদেরই, বিত্তবান নাগরিকদের। আহ্বান জানাই, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পথশিশুদের জন্য কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। অপরদিকে বৃদ্ধদের জন্য প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করাও খুবই জরুরি। যাতে তারা শীতের প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। অতিথি পাখিকে রক্ষা করাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। চোরাকারবারি ও শিকারিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সবার সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতাই পারে অতিথি পাখি রক্ষা করতে। আসুন, এই শীত মৌসুমে দূর-দূরান্ত থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখিকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হই। নির্বিচারে পাখি শিকারের মতো অনৈতিক কাজ বর্জন করি। শীতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আমরা সবাই মিলে উপভোগ করি। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পথশিশুদের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে দিই। মুরুব্বিদের জন্য হয়ে উঠুক শীতের আমেজটা আনন্দময়। অতিথি পাখিকে সুরক্ষা দিতে সর্বোচ্চ সজাগ হই এবং তাদের কোলাহলে ভরে উঠুক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান
শীর্ষ সংবাদ: