
আধুনিক বিশ্বে স্কিল ডেভেলপমেন্টের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ বর্তমান যুগে দ্রæত পরিবর্তিত প্রযুক্তি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, এবং উদ্ভাবনের প্রেক্ষাপটে সঠিক দক্ষতা অর্জন ব্যক্তির উন্নতি এবং টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বর্তমান বিশ্বে শিক্ষার পাশাপাশি স্কিল বা দক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু সার্টিফিকেট থাকলেই জীবন বদলাবে না; প্রয়োজন বাস্তবিক দক্ষতা, যা তোমাকে কর্মজীবনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রীক শিক্ষার মতই স্কিল ডেভেলাপ বর্তমান সময়ে আবশ্যক। সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পিত লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পরবর্তী সামগ্রিক অর্জনে স্কিলের বিকল্প নেই। যত পরিমাণে স্কিল ডেভেলাপ হবে তত পরিমাণে কাজের পরিধি তৈরী হবে। পৃথিবী দ্রæত পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতি মূহুর্তে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে। সেইসব সমস্যার সমাধান ও ক্ষেত্র পরিচালনার জন্য স্কিল সমৃদ্ধ ক্রিয়েটিভ ব্যক্তির অপরিসীম প্রয়োজনীয়তা। চলমান কর্মজগতের বাজারে স্কিল ডেভেলাপের বাইরে সাধারণ কিছুর উপর নির্ভর করে জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব না। একেকজন একেক ধরনের স্কিল নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে প্রস্তুত, সেই জায়গায় নিজের ভিতরে শূণ্যস্থান নিয়ে দর্শক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কাজ করতে গেলে দক্ষতা লাগবেই।
১) হার্ড স্কিল ২) সফট স্কিল
এই দুই ধরনের স্কিল ক্যারিয়ারে উন্নতি এনে দেয়।
হার্ড স্কিল : যেসব দক্ষতা সুনির্দিষ্ট কাজে প্রয়োগ ও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব তাই হলো হার্ড স্কিল। যেমন: একজন বাজারকরণের স্টুডেন্টের প্রমোশনাল স্ট্র্যাটেজি জানাটা হার্ড স্কিল।
সফট স্কিল : ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত দক্ষতাকে সফট স্কিল বলে। নেতৃত্ব গুণ, কোনো সৃজনশীল কাজ, মানসিক চাপ নিয়েও যেকোনো কাজ যত সহজে পারা যায় সম্পন্ন করা, সুন্দর উপস্থাপন করা, এসবই একজন ব্যক্তির ভিতরে থাকা সফট স্কিল। এই দুই ধরনের স্কিল হলো দুইটা স্বতন্ত্র ধারা। এর বাইরেও বর্তমান প্রযুক্তির বিশ্বে আরো কিছু স্কিল ডেভেলাপ অবশ্য করণীয়। যেমন-ডিজিটাল মার্কেটিং, ঝঊঙ,গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, গেম ডেভেলপমেন্ট, এফিলিয়েট মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং, কন্টেন্ট রাইটিং এসব স্কিল নিজের ভিতরে কর্মক্ষেত্রে আলাদা সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে এসব স্কিল উন্নতির পথে অভাবনীয় ভ‚মিকা রাখে।
সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো দক্ষতা। দক্ষতা অনুযায়ী পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। যে বিষয়ে জ্ঞান শূন্য তা নিয়ে রাতদিন ছোটাছুটি করলেও পরিশেষে ফলাফলও জ্ঞানের মত শূণ্যই হয়ে থাকবে। স্কিল, সার্টিফিকেট শিক্ষার মত মুখস্থ বিদ্যার অধীন না, স্কিল নিজের ভিতর থেকে অর্জন করে নিতে হয়। নিজেকে জানতে হয়, বুঝতে হয় যে কোন বিষয়ের দক্ষতা অর্জন নিজেকে কোন জায়গায় নিয়ে দাঁড় করাবে। স্কিল নিয়ে নিত্য অনুশীলন করতে হবে, তাহলেই এক পর্যায়ে স্কিল ডেভেলাপ হয়ে কর্মজগত ও উপার্জনে নিজের অবস্থানকে স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
কেন স্কিল এত গুরুত্বপূর্ণ
আজকের চাকরির বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কর্মী খোঁজে যারা শুধুমাত্র তত্ত¡গত জ্ঞান নয়, বাস্তব দক্ষতাও অর্জন করেছে। একজন দক্ষ ব্যক্তি শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে না, বরং পরিবার, সমাজ এবং দেশের উন্নয়নেও ভ‚মিকা রাখে। এছাড়াও স্কিল ডেভেলপমেন্টের কিছু মূল দিক হচ্ছে -
প্রযুক্তির অগ্রগতি: প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এর সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা যেমন কোডিং, ডেটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি শেখা গুরুত্বপূর্ণ। এতে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা যায়।
পেশাগত দক্ষতা: বিভিন্ন খাতে পেশাগত দক্ষতা যেমন নেতৃত্ব গুণ, যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধান ক্ষমতা, টিমওয়ার্ক, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা প্রয়োজন। এই দক্ষতাগুলি কর্মজীবনে উন্নতি করতে সহায়তা করে। কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন: নতুন স্কিল শেখা চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, একজন উদ্যোক্তা হয়ে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রেও নতুন দক্ষতা (যেমন ডিজিটাল মার্কেটিং, ফাইন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট) গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যক্তিগত উন্নতি: স্কিল ডেভেলপমেন্ট একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা, এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা তাকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হতে সহায়তা করে। বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কিং: বিভিন্ন ধরনের স্কিল অর্জন করে ব্যক্তির পেশাগত এবং ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক উন্নয়ন হয়, যা নতুন সুযোগ এবং আইডিয়া সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।
এভাবে, স্কিল ডেভেলপমেন্ট আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকার এবং সফল হওয়ার জন্য অপরিহার্য। বিশ্ব বাজার বেশ কঠিন অবস্থানে আছে। দিন দিন প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ব্যক্তি পর্যায়ের প্রতিযোগিতা আস্তে আস্তে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। সেই প্রতিযোগিতায় নাম লেখানো কর্মযজ্ঞে ঠাঁই নেওয়ার জন্য স্কিল ডেভেলাপই অনস্বীকার্য মূলধন। যে মানুষ যে বিষয় দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রেখে কাজ করে যেতে পারে তার ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, আর্থিক নিরাপত্তা সবই উজ্জ্বল অবস্থানে চলে যায়। সেই নিরিখে স্কলার্য ক্ষমতা আকাশচুম্বী হয়ে আছে। আধুনিক বিশ্বে স্কিল ডেভেলপমেন্ট একটি একেবারেই অপরিহার্য বিষয়, যেটি শুধু পেশাগত জীবনে নয়, মানুষের সামগ্রিক মানসিকতা ও সমাজের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। আজকের পৃথিবীতে একজন দক্ষ ব্যক্তি সর্বদা প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় এগিয়ে থাকে।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়