ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১

পোস্ট অফিস সংস্কার ও সম্ভাবনা

মোছা. মিথিলা খাতুন

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

পোস্ট অফিস সংস্কার ও সম্ভাবনা

বর্তমান সময়ে কুরিয়ার সার্ভিস বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মিকা পালন করছে। -কমার্স খাতের দ্রæ ¤প্রসারণের ফলে কুরিয়ার সেবার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে এর উচ্চ খরচ সাধারণ জনগণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, -কমার্স ব্যবসায়ীরা বাড়তি ডেলিভারি খরচের কারণে মুনাফা হারাচ্ছেন, যা তাদের ব্যবসার গতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এক্ষেত্রে, বেসরকারি কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর উচ্চ চার্জের বিকল্প হিসেবে পোস্ট অফিস একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। সাশ্রয়ী চার্জ, নিরাপদ সেবা এবং দেশজুড়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পোস্ট অফিস কুরিয়ার সেবার শক্তিশালী প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে। বেসরকারি কুরিয়ার কোম্পানিগুলো তাদের চার্জ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কারণের মধ্যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয়ের বৃদ্ধি এবং অন্যান্য অপারেশনাল খরচ ইত্যাদি  উল্লেখযোগ্য। এর ফলে, গ্রাহকদের ওপর আর্থিক চাপ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জরুরি নথি, পণ্য বা চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে এই উচ্চ চার্জ অনেকের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, -কমার্স ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ডেলিভারি খরচ বৃদ্ধি তাদের ব্যবসার কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশে প্রায় ,৮৮৬টি পোস্ট অফিস রয়েছে, যা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর ফলে দেশের প্রতিটি প্রান্তে সহজে এবং সাশ্রয়ী খরচে ডাক এবং পার্সেল পাঠানো সম্ভব। পোস্ট অফিসের চার্জ বেসরকারি কুরিয়ারের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম, যা সাধারণ জনগণের জন্য আর্থিকভাবে সুবিধাজনক। পোস্ট অফিস সেবার মধ্যে রয়েছে স্পিড পোস্ট, রেজিস্ট্রি ডাক, বুক পোস্ট, পার্সেল সেবা, মানি অর্ডার এবং ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার (ইএমটিএস) এগুলো কুরিয়ার সেবার বিকল্প হিসেবে উল্লেখযোগ্য মিকা রাখতে পারে। বিশেষত, -কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য পোস্ট অফিস ইতিমধ্যে সাশ্রয়ী পার্সেল ডেলিভারি সেবা প্রদান করছে।

তবে, পোস্ট অফিস কার্যক্রমের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। . সময়সাপেক্ষ: পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পণ্য বা চিঠি পাঠাতে কুরিয়ারের তুলনায় বেশি সময় লাগে। . ট্র্যাকিং সিস্টেমের অভাব: অনেক পোস্ট অফিসে এখনো আধুনিক ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু হয়নি, যা গ্রাহকদের পণ্য অবস্থান জানতে অসুবিধা করে। . অনলাইন সেবার সীমাবদ্ধতা: অনলাইন বুকিং এবং পেমেন্ট ব্যবস্থা অনেক পোস্ট অফিসে এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। . গ্রাহক সেবার মান: গ্রাহকদের জন্য সেবার মান আরও উন্নত করতে হবে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে  কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। . আধুনিক ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা। . অনলাইন বুকিং পেমেন্ট সিস্টেম সহজলভ্য করা। . গ্রাহক সেবার মান উন্নত করতে প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ। . দ্রæ ডেলিভারি নিশ্চিত করার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা। পোস্ট অফিস সেবা সংস্কার করে আধুনিকায়ন এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা গেলে এসব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

এছাড়া, সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে, কারণ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে অর্জিত রাজস্ব দেশের উন্নয়নমূলক কাজেও ব্যয় করা যাবে। নতুন ডাক কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণেও এটি সহায়ক হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সাধারণ জনগণও কম খরচে পণ্য পাঠানোর সুযোগ পাবেন। এতে -কমার্স ব্যবসা আরও ¤প্রসারিত হবে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হবে। পোস্ট অফিসকে যদি আধুনিক দ্রæতগামী একটি সেবামাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে এটি কুরিয়ার সেবার কার্যকর বিকল্প হতে পারে। এতে জনগণ সাশ্রয়ী নির্ভরযোগ্য সেবা পাবেন এবং সরকার নতুন আয়ের উৎস খুঁজে পাবে, একই সঙ্গে দেশের ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। এই খাতটির সংস্কারের মাধ্যমে দেশের আর্থিক সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। সরকারের উচিত ডাকঘরগুলোর উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

 

শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া

×