ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন

বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে তিনটি খাতকে কেন্দ্র করে। যথা- কৃষি, গার্মেন্টস ও প্রবাসীদের আয়। এই খাতগুলোর সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোই বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত, নিষ্পেষিত। খেটে খাওয়া শ্রমিকদের প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ভাতা প্রদানেই উচ্চ মহলের যত মাথাব্যথা। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হতে পারে একজন দক্ষ শ্রমিক। প্রতিষ্ঠান মানেই মেশিন, কাঁচামাল ও বিভিন্ন সরঞ্জাম। কিন্তু শ্রমিকদের কথা খুব কমই শোনা হয়। একটি প্রতিষ্ঠান অনেকটা রাষ্ট্রের মতো যেখানে প্রধান থাকেন CEO এবং প্রজারা হলেন শ্রমিক। শ্রমিকদের প্রজা বলার পেছনে একটি বড় কারণ হলো তারা প্রতিনিয়ত অবহেলিত, বঞ্চিত এবং লাঞ্ছিত। প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক চিত্র যতই সুন্দর হোক, ভেতরে চলতে থাকে এক অঘোষিত রাজার রাজত্ব। রাজা সরাসরি প্র্রজাদের নিয়ন্ত্রণ করেন না, বরং এটি করেন তার নিযুক্ত উজির। সাধারণ শ্রমিকের বেতন সর্বনিম্ন্ন ৮,০০০ টাকা নির্ধারিত হলেও, মাস শেষে এনামুল বা বাতেনের হাতে এসে পৌঁছায় মাত্র ৭,৫৫০ টাকা। নারীদের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক আরও কমে দাঁড়ায় ৬,৯৭০ টাকায়। গবেষণায় উঠে এসেছে শ্রমিকদের ঠিক ওপরের পদে থাকা সুপারভাইজার প্যান্টের পেছনের পকেটে রাখেন। কাজের চাপ বাড়িয়ে, বেতন কেটে কিংবা নানা অজুহাতে শ্রমিকদের অর্থ তার পকেটে নিয়ে যান। শুধু তাই নয় অনেক নারী শ্রমিকের প্রতি অসদাচরণও যেন তার ক্ষমতার অংশ। তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে, বিচারের বদলে শাস্তি পেতে হয় ভুক্তভোগী শ্রমিককেই। কোম্পানির স্লেøাগান যেখানে ‘আমাদের এখানে কোনো শ্রমিক নেই, রয়েছে একদল শিল্পী’ বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এখানে নিত্যদিনের বিষয়। গফরগাঁওয়ের মেয়ে মর্জিনা মাসিক বেতন হাতে পেয়ে বের হওয়ার সময় রাস্তায় ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অপরদিকে রাসেল তার প্রাপ্য অর্থ এলাকার বখাটেদের হাতে তুলে দিয়ে বাড়ি ফেরে। কিন্তু এই ঘটনা প্রকাশ্যে বলতে পারে না কেউ। কারণ এখানে অপরাধীই বিচারক। এসব অন্যায় বন্ধ করতে হলে এই অঘোষিত রাজার শাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এক অঘোষিত সরকার চিরকাল থেকে যাবে।

মাহারিয়া ইসলাম মিলয়
ঢাকা কলেজ

×