সম্প্রতি প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী এলাকায় গভীর রাতে কৃষক ফরিদুল আলম নিজস্ব ধানখেত পাহারা দিতে গেলে হাতির পালের মুখোমুখি হন। এতে বন্যহাতির আক্রমণে প্রাণ হারান তিনি। পরবর্তীতে প্রতিশোধ নিতে কৃষকদের পাতানো বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু হয় গর্ভবতী এক মা-হাতির। এ কেমন নির্মমতা! প্রতিশোধের দাবানল থেকে মুক্তি পেল না অবুঝ প্রাণীও। এ পৃথিবী সকল প্রাণীর অভয়ারণ্য হওয়ার কথা। কিন্তু তা ক্রমশ সঙ্কুুচিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনসংখ্যা। বনায়ন ধ্বংস করে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসস্থল। এতে শুধু পশুপাখির জীবন বিপন্ন হচ্ছে তাই নয়, একই সঙ্গে মানব জীবনও পড়ছে চরম হুমকির মুখে।
মানুষ অপ্রয়োজনে বা তুচ্ছ কারণে ভয়ংকরভাবে স্বজাতি ও পশুপাখিকে হত্যা করে। আর কোনো জীবের মধ্যে দেখা যায় না এ রকম নির্মমতা। এমনকি খুব বিষধর সাপও আগবাড়িয়ে মানুষকে আক্রমণ করে না। এসব বর্বরতার ক্ষেত্রে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মানবজাতি যেন ভুলতে বসেছে এ পৃথিবী শুধু তাদের আবাসস্থল নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় যে কোনো দেশের আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ বনভূমি রয়েছে বলে জানায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আইনানুযায়ী কোনো পশুর ওপর অবিচার, অনিয়ম কিংবা অকারণে নির্যাতন দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এর বাস্তব প্রয়োগ খুবই কম।
ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণিকুলের আবাসস্থল যখন বাসের উপযোগী থাকে না, দেখা দেয় খাদ্যাভাব, তখন অনেক প্রাণী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসে। কিন্তু মানুষ যে তাদের জন্য আরও প্রাণঘাতী তা হয়তো বুঝে উঠতে পারে না। ফলে, নিষ্ঠুরতার শিকার হয়। যেসব পশু-পাখির মাংস মানুষের খাওয়ার যোগ্য, সেগুলো শিকারের পেছনে না হয় একটা যুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু যেগুলো মানুষ খায় না, চামড়া ও শরীরের কোনো অংশ ব্যবহার করে না, তাদের হত্যা করার পেছনে কোনো যুক্তিই খুঁজে পাওয়া যায় না। পশুপাখি শিকারি বা হত্যাকারী বুঝতেই পারে না যে, তার এ নৃশংসতার কারণে নিজের বেঁচে থাকার পথকে ধ্বংস করছে। পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা যে একটা অপরাধ, তাও তারা জানে না। কারণ, এ অপরাধে কাউকে তারা শাস্তি পেতে দেখে না। প্রাণী হত্যার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষুণ্ন হয় এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়। এ বিষয়েও আমাদের সমাজে জনসচেতনতার প্রকট অভাব। বাংলাদেশে যখন পশু-পাখির ওপর নির্দয় আচরণ করা হয় তখন আমলা, রাজনীতিবিদ বা অন্য পেশাজীবীর লোকজন এ নিয়ে উদ্বেগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করেন না বললেই চলে। জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতাবিরোধী শিক্ষার প্রসার ও সচেতনতা প্রয়োজন। যার সুফল পাবে পরবর্তী প্রজন্ম। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সরকারিভাবে পশুপাখি সংরক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার করা আবশ্যক। এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী শাখা, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার নেতৃত্বস্থানীয়দের একসঙ্গে কাজ করা দরকার। প্রত্যাশা, দেশটি হবে সকল প্রাণীর জন্য এক অভয়ারণ্য।
চাই বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য
শীর্ষ সংবাদ: