ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

গেজেট প্রকাশের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

গেজেট প্রকাশের প্রত্যাশা

বহুল আলোচিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত হলেও অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় এখনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন এই আইনে মামলার শিকার সাধারণ মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, চলমান মামলায় আদালত থেকে হাজির হওয়ার কথা বলা হলে তা সমন আকারে অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়। এই সমন থানায় এলে অভিযুক্তরা কেউ কেউ পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমন নিয়ে বাণিজ্যের চেষ্টা চলছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
আশার কথা, বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে ইতোমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তবে এই আইন বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার সুরক্ষা আইন নামে একটি আইন করার কথাও বলা হয়েছে। এতে কম্পিউটার ও হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধের বর্ণনা থাকবে। নইলে তথ্য ও প্রযুক্তির নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা। যদিও আইন উপদেষ্টা আশ^স্ত করে বলেছেন যে, এই নতুন আইনের সঙ্গে মানুষের কথা বলার অধিকারের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
বিগত সরকারের আমলে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণীত হলে এটি বিতর্কের জন্ম দেয়। এ আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশিরভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে তা আগের মতো সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ারে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না। এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ এমনই অভিমত জানিয়েছিল। জাতীয় সংসদে ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩’ পাস হওয়ার পর উদ্বেগ জানিয়ে একই পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, এই আইন সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এতদিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, তা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাÑ এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়ে গেছে। এমন স্পষ্ট বক্তব্যের পরও বিগত সরকার আইনটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণে প্রয়োগ করে আসছিল।
প্রসঙ্গত, সাইবার বিশ্বে বাংলাদেশ অনেকটাই নতুন। এর সম্ভাবনা ও সংকট সম্পর্কে সচেতন মানুষ সম্যক অবগত। আইসিটি সংশ্লিষ্ট নীতি কার্যকর, সফটওয়্যার প্রকল্পের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, বিশ্বমানের আইসিটি পেশাদার গড়ে তোলা এবং এ খাতে সমৃদ্ধির জন্য একটি বিশ্বমানের আইসিটি ইনস্টিটিউশন গড়ে তুলতে আইসিটির উন্নয়ন আবশ্যক। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোর্স চালু করা দরকার, যাতে করে আমাদের নতুন প্রজন্ম সাইবার নিরাপত্তা এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে দেশের আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। এটাই বাস্তবতা যে, দেশে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। তাই এই সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্ব সাইবার অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন। এ বিষয়ে আমাদের এখনো কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইনটি যেহেতু বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই দ্রুত গেজেট প্রকাশ করা হলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে।

×