ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

তিস্তা সেচ প্রকল্প

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

তিস্তা সেচ প্রকল্প

কৃষিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশে আমজনতার প্রধান খাদ্য ধান-চালের অন্যতম জোগানদাতা উত্তরাঞ্চলীয় জনপদ। হিমালয়ান পলল ভূমি দ্বারা গঠিত এ অঞ্চলের মৃত্তিকা বড়ই উর্বর। দেশের খাদ্য চাহিদা ও শস্য উৎপাদনে এ অঞ্চলের জুড়ি নেই। রংপুর, দিনাজপুর ও   নীলফামারী জেলার ১২টি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা ব্যারাজের দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার। ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উত্তরাঞ্চলে তীব্র খরা ও মন্দাপীড়িত হওয়ায় ব্রিটিশ-ভারত সরকার ১৯৩৭ সালে সর্বপ্রথম তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের পর ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান সরকার উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৯ সালে শুরু হয় তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের কাজ। কয়েক ধাপে জুন-১৯৯৮ সালে শেষ হয় তিস্তা ব্যারাজ। সেচ প্রকল্পের সক্ষমতা বাড়াতে ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান।
২০২৭ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ হলে এ অঞ্চলের ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে অনায়াসে চাষাবাদ করতে পারবেন কৃষককুল। বোরোসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে সমৃদ্ধ হবে তিস্তা তীরাঞ্চলীয় বিস্তীর্ণ প্রান্তর। তিস্তা ব্যারাজে জলপ্রবাহ গতিশীল করতে পারলে সমৃদ্ধ হবে উত্তরের জনপদ। ইতোমধ্যে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে শিখেছে এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষি পরিবারগুলো। অসংখ্য ছোট নদ-নদী-খালবেষ্টিত এই কৃষি জনপদে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে কৃষি অর্থনীতি। কৃষিতে ব্যবহার হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি। সরকারী বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর আন্তরিক পরামর্শে এবং কৃষকদের স্বাপ্নিক অভিযাত্রায় বদলে যাচ্ছে উত্তরের কৃষি অর্থনীতি। অনাবৃষ্টির ও খরার সময় তিস্তা ব্যারাজ এ অঞ্চলের জন্য অপার আশির্বাদ। পূর্ণ মাত্রায় তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প চালু হলে ধানসহ সকল কৃষিপণ্যের বাম্পার ফলন হবে। সেচ প্রকল্পের আওতাধীন সব পুরনো, ক্ষতিগ্রস্ত সেচনালা সংস্কার ও নতুন নতুন সংযোগ তৈরির মাধ্যমে কৃষকের দোরগোড়ায় জলপ্রবাহ পৌঁছে দিতে হবে। অভিন্ন নদীর উজানে প্রতিবেশী দেশ বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রত্যাহারজনিত কারণে ভাটি অঞ্চলের নদ-নদীতে নাব্য সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটা মৎস্য ও কৃষি অর্থনীতির সমৃদ্ধির পথে অন্তরায়। বর্ষা মৌসুমে পানির ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যারাজ তীরবর্তী ফসলের মাঠ।
শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত জলপ্রবাহ না থাকায় বিরান হয় ফসলের মাঠ। প্রায় ৪ দশক ধরে ঝুলে আছে আন্তর্জাতিক এই নদীর পানির হিস্যা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ এমন এক ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে, যার সমুদ্রসীমা, স্থলসীমা ও আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার সুষম বণ্টন বহুকাল থেকেই বাধাগ্রস্ত। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, কৃষি ও মৎস্য সম্পদ বাঁচিয়ে রাখতে এবং জীব-বৈচিত্র্যের টেকসই সংরক্ষণ বহুলাংশে নির্ভর করে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সুষম পানি বণ্টন ব্যবস্থাপনার ওপর। বহুমাত্রিক উৎপাদনে তিস্তা ব্যারাজের ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও প্রয়োগে বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে এ অঞ্চলের সুবিধাভোগী কৃষক প্রতিনিধি সম্পৃক্ত করা গেলে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব অচিরেই পড়বে বলে আশা করা যায়।

×