সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতি রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অনন্য। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানসহ বিপদে-আপদে আশা ও ভরসার একমাত্র আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। বিগত বছরগুলোতে জনগণের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর ফলে গণঅভ্যুত্থানের পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আক্রমণের শিকার হয় পুলিশ। দেশের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীকে ভিন্নমত ও পথের প্রতিপক্ষ দলনের সেই অপসংস্কৃতি তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খুব বেশি মাত্রায় দৃশ্যমান। উন্নত দেশগুলোতে পুলিশ-জনতা সম্পর্কের ভ্রাতৃত্ববোধ মানবমনকে পুলোকিত করে। আমরা আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও আন্তঃমানবিক সংস্কৃতিকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সুষম সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশসহ দেশের সকল বাহিনীর প্রতিটি সদস্য হবেন আমজনতার অকৃত্রিম বন্ধু।
উপমহাদেশে পুলিশ বাহিনীর জন্মবৃত্তান্তে জানা যায়, ব্রিটিশ গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিশ ১৭৯৩ সালে ভারতবর্ষে প্রথম দেশের নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে জনবহুল অঞ্চল ভাগ করে থানাভিত্তিক পুলিশি ব্যবস্থাপনা চালু করেন। প্রতিটি থানায় একজন দারোগার নেতৃত্বে একজন করে মোহরার ও জমাদার এবং দশজন বরকন্দাজ (কনস্টেবল) কাজ করতেন। এভাবেই সামাজিক নিরাপত্তায় পুলিশের যাত্রা শুরু। পুলিশ বাহিনীর অতি দলীয়করণের ফলে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর বাস্তবতায় স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে যে সকল শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে এক হাজার ছাত্রকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে নিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। ইতোমধ্যে চারশত জনকে নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে যুক্ত রাখারও একটি প্রস্তাবনা আছে। ছাত্রদের খন্ডখালীন দায়িত্বের জন্য কিছু সম্মানীর ব্যবস্থা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দেশের নাগরিকদের সেবায় শিক্ষিত তরুণ সমাজকে যত বেশি সম্পৃক্ত করা যাবে তাদের মাঝে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেতনা ততবেশি আলো ছড়াবে। দেশের বড় বড় শহরে ট্রাফিক পুলিশের সাহায্যকারী হিসেবে তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষিত করা জরুরি। যারা দায়িত্বে কর্মনিষ্ঠ হবে।
অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যেন শাস্তির আওতায় না আসে। কোনো স্বৈরাচারের নিয়ামক শক্তি হবে না পুলিশ বাহিনী। গোত্র-বর্ণ-ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল অসহায় মানুষের অপার ভরসাস্থল হবে পুলিশ। বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের মাথায় থাকতে হবে, তারা নিপীড়ক নয়, জনসেবক। কোনো অনৈতিক কাজে পুলিশ সম্পৃক্ত হবে না। ভিন্নমতের দলনে পুলিশকে ব্যবহার করা যাবে না। বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে গণমুখী করে জনসম্পৃক্ত করতে পারলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। বিপ্লবোত্তর গত পাঁচ মাসে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, দখল, চাঁদাবাজি, খুন ও ধর্ষণের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। মাঠ কার্যক্রমে পুলিশের সরব উপস্থিতি কম, জরুরি সেবায় ৯৯৯-এ কল করলেও তেমন সাড়া মিলছে না। বহুমাত্রিক অপরাধের ঘটনায় দেশের থানাগুলোতে তেমন একটা মামলা হয়নি। আবার যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলোর তথ্য অনুসন্ধানে পুলিশের আগ্রহ তেমন লক্ষ্য করা যায় না। পুলিশ বাহিনীকে হতে হবে গণমুখী, জনবান্ধব, অসহায় মানুষের আশা, ভরসা ও আস্থার প্রতীক। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে অপরাধী শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখিসহ যথাযথ শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে পুলিশ বাহিনীর হারানোর ঐতিহ্য ফিরে আসবে।
চাই জনবান্ধব পুলিশ
শীর্ষ সংবাদ: