ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১

শীত মানেই দুর্ভোগ

সবুজ মিয়া

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

শীত মানেই দুর্ভোগ

শরতের স্নিগ্ধতার শেষে প্রকৃতিতে আগমন ঘটে নিদারুণ শীতের

শরতের স্নিগ্ধতার শেষে প্রকৃতিতে আগমন ঘটে নিদারুণ শীতের। চারদিকে ঘন কুয়াশায় ছেঁয়ে যায়। চোখ মেললে দূরের বস্তু দেখা যায় না। কাজ কর্মেও স্থবিরতা চলে আসে। সারাদিন রুমে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার মজাই আলাদা। কিন্তু এই সুখ কি আর সবার কপালে সয়? বলছিলাম শীতার্ত মানুষের কথা। যাদের কাছে শীত মানেই সীমাহীন দুর্ভোগ।

শীত মানেই আতংক। বছরের বাকি মাসগুলো কোনো রকম সুখে দুঃখে কাটলেই যত বিপত্তি বাধে শীতে। কনকনে হাড় কাঁপানো শীত যেখানে গরম কাপড় পড়েই বাহিরে বের হওয়া যায় না। মানুষ থেকে শুরু করে পশুপাখি সবাই উষ্ণতা খুঁজে বেড়ায়। 
 সেখানে একটুকরো কাপড় পড়ে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে শীতার্ত মানুষগুলো। কখনো সখনো তাও ঠিকমতো জুটে না। বিশেষ করে সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বস্তি, স্টেশন, মার্কেট, ফুটপাত কিংবা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে মানুষগুলোর। রাতের শহরে বের হলেই এমন ঘটনা অহরহ মানুষ চোখে পড়ে। ফুটপাত, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, মার্কেট কিংবা গাছের নিচে চাদর, ছেড়া কাঁথা নিয়ে শুয়ে আছে একদল মানুষ।

শরীরগুলো কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে দুলছে। বস্তির ছোট ঝুপড়ি ঘরে শীতে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে কতগুলো বিবর্ণ চেহারার মানুষ। দূর থেকে গায়ের খাড়া লোমগুলো দেখে সাইবেরিয়ার বনাঞ্চল বলে মনে হলেও ভুল হবে না। গ্রামেও এর সংখ্যাটা নিহায়ত কম নয়। 
শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভোগে শিশু ও বৃদ্ধরা। এ সময় নানাবিধ রোগ-বালাই বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। কিন্তু তাদের কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই। রাষ্ট্র বড় বড় উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণে যতটা মনোযোগী, ঠিক ততটাই অমনোযোগী শীতার্ত মানুষের প্রতি।

মাঝে মধ্যে দু-একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, বিত্তবান ব্যক্তি শীতার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা না পাওয়া, সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি কারণে এর যথাযথ সুফল পাওয়া যায় না।
শীতে অভাবী মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সব পেশা-শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষ মানুষের জন্য এই স্লোগানকে সামনে রেখে নিজ নিজ স্থান থেকে সাধ্য অনুযায়ী মানবতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। দেশী-বিদেশী এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু শহরে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ না রেখে প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলেও ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি পর্যায়েও উদ্যোগ নিতে হবে।

জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে বাদ দিয়ে কখনো সুষ্ঠু উন্নয়ন করা সম্ভব না। সরকারি পর্যায়ে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে আবাসন ও পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার চাইলে এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কাজ করতে পারে। তাহলে শীতার্ত মানুষদের ভোগান্তির 
লাঘব হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

×