ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১

যত্নে থাকুক পথশিশু

রাকিব হাসান

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

যত্নে থাকুক পথশিশু

পথশিশু

সমাজের এই অবহেলিত শ্রেণি দিনের পর দিন খোলা আকাশের নিচে শীতের প্রকোপ সহ্য করে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যায়। তাদের জীবনের এই দুর্দশা আমাদের মানবতার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।  
পথশিশুরা সাধারণত রাস্তাঘাট, ফুটপাথ বা বিভিন্ন পার্কে রাত কাটায়। শীতকালে যখন তাপমাত্রা হ্রাস পায়, তাদের জন্য এটি বেঁচে থাকার এক ভয়ানক লড়াইয়ে পরিণত হয়। শরীরে সঠিক পরিমাণে গরম পোশাক না থাকায় শীতজনিত অসুখ-বিসুখ যেমন ঠান্ডা, জ্বর, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগে তারা আক্রান্ত হয়। পর্যাপ্ত খাবার এবং গরম আশ্রয়ের অভাবে তাদের জীবন আরও বেশি হুমকির মুখে পড়ে।  
বাংলাদেশের মোট পথশিশুর মধ্যে অর্ধেকের অবস্থা ঢাকায়? বিভিন্ন বাস স্টেশন, ট্রেন স্টেশন ও প্লাটফর্মসহ বিভিন্ন মাঠে ও রাস্তার ধারে কাতর জীবন কাটায় শিশুরা। ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা ছোটখাটো কাজ করে আহার জোটায় পথশিশুরা। শীতকালীন এই সময়ে বাইরে রাত কাটানো তাদের জন্য অতিরিক্ত কষ্ট বয়ে আনে।

পথশিশু শব্দটা শুনলেই আমাদের কাছে বাবা-মা বা পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের কথা মনে পড়ে। ফুটপাত বা স্টেশনে অবস্থানরত এই শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র কোনটিই নেই। এছাড়া পথশিশুদের শিক্ষার কথা ভাবাও বহু দূর? তবে আসন্ন শীতের এই মৌসুমে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদেও নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। 
ঢাকাসহ দেশের সকল পথশিশুদের এই দুঃখ দূর করার জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। পথশিশুদের শীত থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর পদক্ষেপ। পুরনো কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেট, টুপি, মোজা সংগ্রহ করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একত্রে এ কাজটি করতে পারে।  
তীব্র শীতে পথশিশুদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্থানীয় স্কুল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার বা খালি জায়গাগুলোকে অস্থায়ী শীতকালীন শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে তাদের জন্য গরম কাপড় ও খাবারের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।
শীতকালে পথশিশুদের পুষ্টির অভাব পূরণে গরম খাবার ও পানীয় সরবরাহ করা জরুরি। বিভিন্ন সংগঠন বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। শীতকালীন রোগ প্রতিরোধের জন্য ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবীরা এ কাজে অংশ নিতে পারেন। পথশিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদের প্রতি অবহেলা করা মানে আমাদের নিজেদের প্রতি দায়িত্বকে অবজ্ঞা করা।

একসঙ্গে কাজ করলে শীতের তীব্রতায় তাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব। আসুন, আমরা সবাই মিলে তাদের জন্য সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিই। আমাদের ছোট্ট একটি পদক্ষেপই হতে পারে কোনো পথশিশুর জীবনের জন্য বড় পরিবর্তন। মানবতা শুধু কথায় নয়, কাজেই ফুটে ওঠে। এবার শীতকালটি তাদের জন্য একটু উষ্ণ করার দায়িত্ব আমরা নেব কি?

ঢাকা কলেজ, ঢাকা থেকে

×