সম্পাদকীয়
সারা বিশ্বে যখন করোনাক্রান্ত রোগীরা একের পর এক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিলেন সে সময়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা আমাদের একটি সুসংবাদ দেন। সেটি হলো কোভিড-১৯ রোগীদের উপসর্গ অর্ধেক কমিয়ে আনা। দেশের একদল চিকিৎসক কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল ওষুধ আইভারমেকটিন প্রয়োগের পর বলেছিলেন, ওষুধটি ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
আইভারমেকটিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ করে তারা দেখেছেন, কোভিড-১৯ রোগীদের উপসর্গগুলো তিন দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। আইভারমেকটিনের পরীক্ষামূলক এই প্রয়োগের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. তারেক আলম, যিনি ইন্টারনাল মেডিসিন ও শ্বাসতন্ত্রের রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।
আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতে চাই না যে,বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মান বিশ্বের কোনো দেশের তুলনায় কম নয়। শুধু সুযোগের অভাবে চিকিৎসকরা সেটি তুলে ধরায় পিছিয়ে আছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো সুযোগ দেওয়া হলে তারাই তাদের যোগ্যতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত।
বাংলাদেশে যখন প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। দেশের চিকিৎসকের সফলতায় আরও একটি পালক যুক্ত হলো প্যানক্রিয়াস পাথর অপারেশনে ‘সহিদ পদ্ধতি’র সফলতা প্রমাণিত হওয়ায়। পরিপাকতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়। প্যানক্রিয়াসের কাজ হলো পাচক রস বা এনজাইম তৈরি করে খাবার হজম করা।
পাশাপাশি ইনসুলিন বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন তৈরি করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা। গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটিতে ইনফেকশন, পাথর, টিউমার ও ক্যান্সার রোগ হতে পারে। সাধারণত যে অঞ্চলে গরম বেশি পড়ে সে অঞ্চলে পাথর বেশি হয়। আশার কথা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান প্যানক্রিয়াস পাথর অপসারণের এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যার নাম ‘সহিদ পদ্ধতি’। এর সাফল্যের হার প্রায় শতভাগ। জার্মানি, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতির সফল উপস্থাপন করে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। নতুন এই পদ্ধতি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও উজ্জ্বল করেছে।
রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন হলে আয়োজিত ‘প্যানক্রিয়াস পাথরে সহিদ পদ্ধতি’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও বিশেষ আলোচনায় বক্তারা এই সফলতার কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান জানান, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিজস্ব এই পদ্ধতির মাধ্যমে অপারেশন শুরু করে এ পর্যন্ত মোট ২১১টি সার্জারি করেছেন। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসায় সময় কম লাগে, রক্তপাত খুবই সামান্য, কোনো প্রকার জটিলতা নেই, মৃতুর হার শূন্য।
পুরাতন পদ্ধতিতে ব্যথা নিরাময়ের হার মাত্র ৬০ থেকে ৭০ ভাগ, সেখানে এই পদ্ধতিতে ব্যথা নিরাময়ের হার ৯৬ ভাগ। প্যানক্রিয়াস পাথর চিকিৎসায় পুরনো অনেক পদ্ধতির চেয়ে ‘সহিদ পদ্ধতি’র সফলতা অনেক বেশিÑ এই বাস্তবতা দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে, তাতে কোনো সংশয় নেই।