সম্পাদকীয়
বর্তমান বিশ্ব প্রকৃতপক্ষে একটি গ্লোবাল ভিলেজ। ইন্টারনেট ও স্মার্ট মোবাইল সংস্কৃতির ব্যবহার প্রায় গোটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এর পাশাপাশি স্থল, নৌ ও আকাশপথে সহজে যোগাযোগের প্রভূত সুবিধা। তদুপরি প্রতিটি দেশ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কেননা, কোনো দেশই নাগরিকদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের নিমিত্ত শতভাগ স্বনির্ভর নয়। তা সে হোক না কেন খাদ্য-পোশাক থেকে শুরু করে শ্রমবাজার পর্যন্ত।
পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা এবং ওষুধ-বিষুধ যাই হোক কেন। ফলে, দেশে-বিদেশে আন্তঃবাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে বহুগুণ। সর্বোপরি বর্তমান সময় শুধু রাজনীতিনির্ভর নয়, বরং রাজনীতি ও অর্থনীতি পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলে। যে কারণে অনেক সময় অনিবার্য নির্ভরশীল হতে হয় শত্রুভাবাপন্ন বৈরী দেশের ওপরও। অনেক ক্ষেত্রে তা এমন কি তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমেও সম্পন্ন হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেপজাকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেপজার বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এ বিষয়ে কিছু নির্দেশও প্রদান করেন। সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এসব পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশের শিল্প খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ আনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক প্রচার চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা সবাই বাংলাদেশ এবং উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সম্পর্কে প্রচার করতে পারে বিদেশে। প্রয়োজনে আয়োজন করতে পারে রোড শোর। তাতে বিভিন্ন দেশে ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে দেশের।
বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগসহ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে উৎসাহিত হবেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে উচ্চতর শিক্ষার জন্য অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও রাখতে পারেন ইতিবাচক ভূমিকা।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন এবং দেশে জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলন পরবর্তী বিদেশী বিনিয়োগে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে চৈনিক বিনিয়োগকারীরা এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। বর্তমানে বেপজার ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (বেজা) ৪৫২টি শিল্পকারখানা চালু রয়েছে।
১৩৬টি কারখানা নির্মাণাধীন। চলমান কারখানাগুলোতে ১শটির বেশি স্থানীয় বিনিয়োগকারী এবং বাকিগুলো যৌথ মালিকানাধীন। এসব কারখানায় ৫২ শতাংশ তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, পোশাক সামগ্রী এবং অন্যগুলোতে বিবিধ খেলনা, কফিন ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। তবে বেজা অঞ্চলে আরও কিছু অবকাঠামো নির্মাণ এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়া আবশ্যক। যেমন- নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, পানি ও বিদ্যুত সরবরাহ, বন্ডেড গুদাম ইত্যাদি। এছাড়াও চট্টগ্রাম- সাংহাই সরাসরি বিমান যোগাযোগসহ বিভিন্ন দেশে ভিসা কাউন্সিলর নিয়োগও জরুরি। পর্যায়ক্রমে এসব সুবিধা দেওয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।