দীর্ঘ সময় ধরে মাটির নিচে জমে থাকা শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূমিকম্প হয়। ভূ-অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটের অবস্থান এবং তার স্থানান্তর ঘটলে এই ধরনের বিপর্যয় ঘটে। প্রাকৃতিক এই দূর্যোগের কোনো পূর্বাভাস দেয়া যায় না।
ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা এই তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূ-ত্বক যে তিনটি প্লেটের উপর অবস্থিত তার মধ্যে ভারতের প্লেট, বার্মা প্লেটের নিচে আটকে আছে প্রায় চারশত বছর ধরে এবং এদের মধ্যে সঞ্চিত হচ্ছে প্রবল শক্তি যা ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম, এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানে ঘন ঘন ছোট মাত্রার ভূমিকম্প ঘটছে। এগুলো একদিকে যেমন মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে বড় কোনো ভূমিকম্পের সম্ভাবনার সংকেতও বহন করছে।
যদিও এসব ছোট ভূমিকম্প সাধারণত ভয়ঙ্কর হয় না, তবে তাদের উপস্থিতি আমাদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা হয়ে থাকতে পারে। কারণ, বড় ভূমিকম্পের আগে প্রাথমিকভাবে ছোট ভূমিকম্প হয় এবং একসময় তা এক বিশাল বিধ্বংসী আঘাতে পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকা। ঢাকার অধিকাংশ ভবন রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের নিয়মানুযায়ী নির্মিত নয়। এর ফলে এসব ভবন বড় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হলে সহজেই ধ্বসে পড়বে। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও অনেক ভবন সহ্য করতে পারবে না।
যার ফলে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়াও ঢাকায় অনেক পুরনো ভবন রয়েছে, যেগুলোর নির্মাণকাল অনেক আগের। এ ধরনের ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনে অত্যন্ত অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং কোনো শক্তিশালী কম্পনে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।আমাদের দেশের ভূমিকম্প বিষয়ে জনসচেতনতার অভাবও ব্যাপক।
এখন সময় এসেছে, যে কোনো বড় বিপর্যয় আসার আগে আমরা সচেতন হই এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি। সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে সেইসব ভবনগুলো চিহ্নিত করা যেগুলো রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের নিয়মনীতি মেনে তৈরি হয়নি এবং বিশেষত পুরনো ভবনগুলো যেগুলো ভূমিকম্প সহনশীল নয়, সেগুলো উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
কেননা, ভবিষ্যতের অশনি সংকেত সামনে রেখে এখনই এই পদক্ষেপ না নিলে, একদিন তা আমাদের জন্য বড় ধরনের মূল্য পরিশোধের কারণ হতে পারে। এছাড়া, নাগরিকদের মধ্যে ভূমিকম্পের আগে, পরে এবং চলাকালে করণীয় বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
স্কুল, কলেজ, অফিস এবং ঘরে ঘরে নিরাপত্তা সম্পর্কিত নিয়মাবলী প্রচার করা উচিত। সেই সঙ্গে আধুনিক নির্মাণ কৌশল গ্রহণ ও ভবনগুলোর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য সঠিক নীতিমালা অনুসরণ করা প্রয়োজন। একটি সামগ্রিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা যদি এখনই এই বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে না নেই, তবে তা ভবিষ্যতে আমাদের সবার জন্য অনেক বড় বিপর্যয় হয়ে দেখা দিতে পারে।
ঢাকা কলেজ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
কুতুবে রব্বানী