হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে হবে রাজধানীর পুরনো ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলোর। কালের সাক্ষী হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষজ্ঞ দৃষ্টিকোণ ও নৈতিক মানের স্খলনজনিত উপাদানই সমস্যা। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলোর অনেকটিই শতবর্ষী ইতিহাসের প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন উত্তর কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। ছাত্রদের অভ্যন্তরীণ কলহ, প্রতিষ্ঠানে-প্রতিষ্ঠানে আধিপত্যের লড়াই-সংঘাতে শ্রেণি কক্ষ ভাঙচুর, অবকাঠামো ধ্বংস, ক্লাস, পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ইত্যাদি। মোটা দাগে স্কুলগুলোতে যে সমস্যা দেখা যায়, তা সব প্রতিষ্ঠানে প্রায় একই রকম।
অধিকাংশ স্কুলে স্থায়ী অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডি নেই। স্কুল কেন্দ্রিক ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, অডিট বাণিজ্য, পদবি বাণিজ্য, কোচিং কেন্দ্রিক শিক্ষকদের স্বার্থদ্বন্দ্বে গ্রুপিং, লবিং প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অভিভাবকদের বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। যার ফলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্যক্তি অর্থনৈতিক স্বার্থদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। গণমাধ্যমে প্রায়ই জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায়।
ঢাকায় অবস্থানরত দেশের অন্যতম প্রাচীন ও নারী শিক্ষার অগ্রদূত প্রতিষ্ঠানের একজন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যিনি চলতি মাসে অবসরে যাওয়ার আগে ১১ জন শাখা প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বিপুল অর্থের বিনিময়ে। অনিয়ম, দুর্নীতি, শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, স্কুল কমিটির আধিপত্য ও রাজনৈতিক প্রভাব শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। প্রতিটি সমাজেরই কোনো না কোনো অংশে ক্ষয় দেখা দেয়, এটিই বৈশ্বিক বাস্তবতা। তবু আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে সমৃদ্ধির পথে। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলোর প্রতি দেশবাসীর যে আস্থা-বিশ্বাস ছিল, তা আজ ম্রিয়মাণ, অস্তাচলমুখী। ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষক-স্টাফ নিয়োগ, কমিটি গঠন, পদায়নÑ সর্বত্রই এক অরাজকতা চলমান। এসব দেখার কেউ নেই। জবাবদিহির কোনো অবকাশ নেই। অনিয়মই যেন নিয়ম। এ অবস্থা একটি জাতির কল্যাণ, অগ্রগামিতা ও সমৃদ্ধির পথে প্রচণ্ড অন্তরায়।
ফলে কোমলমতি শিশু, কিশোর, তরুণরা মানসিকভাবে আঘাতগ্রস্ত হচ্ছে। সুকুমার বৃত্তির ব্যাঘাত ঘটছে।
দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এ অব্যবস্থাপনা শিক্ষার-পরিবেশ ব্যাহত করছে। এ বিষয়ে দেশের তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন একপ্রকার নির্বিকার। সম্প্রতি ঢাকার ন্যাশনাল হাসপাতালে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুরনো ঢাকার শতবর্ষী এক স্কুলে ২৪ নভেম্বর হামলা করে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র। পরীক্ষা ও শিক্ষা কার্যক্রম অনিদিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়। পুনরায় ৭ ডিসেম্বর শুরু হয় কার্যক্রম। ছাত্রদের হামলায় কয়েকটি শ্রেণি কক্ষের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহিরাগত শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিনে হামলা করে ক্যাশের টাকা-পয়সা লুটে নেয়। যারা আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বে, সেক্ষেত্রে ছাত্রদের এমন আচরণ জাতির জন্য অশনিসংকেত।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রায় গত দুই যুগ ধরেই শিক্ষার অতিমাত্রায় বাণিজ্যমুখিতা অভিভাবকদের করেছে নিদারুণ অসহায়। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলোর প্রতিটিতে ২০-৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শত কোটি টাকার বেতন-ভাতা, ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য, ডোনেশনের নামে অর্থ আদায়ের ঘুণে ধরা অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। বাবা-মা তাদের আদরের সন্তানদের ভালো একটি স্কুলে ভর্তি করাতে ৪-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে থাকেন, যা থেকে একটি জাতির নৈতিকতা কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা অনুমেয়। অভিভাবক হিসেবে আমাদের অস্থির মানসিকতার অপনোদন হওয়া অতীব প্রয়োজন। অধিকাংশ শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ নেই। অর্থ উপার্জনে তারা কোচিংমুখিতায় নিমগ্ন।
যদিও বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি চলমান। জীবনধারণ পদ্ধতির প্রতিনিয়ত পরিবর্তনও কোনো অংশে কম দায়ী নয়। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে সরকারের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন নীতি নির্ধারকগণ সুনজর দেবেন আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে। সংবাদপত্রে প্রকাশ পেয়েছে, শুধু শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্কুল কমিটির নীতি-নির্ধারকগণ ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
আগামীর বাংলাদেশের জন্য সুস্থ জাতি বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মের কাণ্ডারিদের মাঝে সুশিক্ষার প্রকৃত আলোর-বিতরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দুদকের অনুসন্ধান প্রয়োজন। শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই রুটিন বাণিজ্যের কথা শোনা যায়। মানুষ গড়ার কারিগরদের মানসিকতা যদি এমন হয়, তবে জাতি পথ হারাবে। টিউশনি, কোচিংয়ে অধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলোর শিক্ষকগণ অর্থ উপার্জনে অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। শিক্ষকদের মাঝে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়, যার নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা।
সরকার কর্তৃক ২০১৩ সালে প্রণীত কোচিং-টিউশনি নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ এক্ষেত্রে দৃশ্যমান নয়। বারবার শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন ও সংস্কারের ফলে নতুন এ পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হচ্ছে ছাত্র-শিক্ষকদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন অস্থিশীল পরিবেশ ৫ আগস্ট বিপ্লবপরবর্তী পর্যায়ে খুব বেশি দৃশ্যমান। যা গত দেড় দশকের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ মনে করেন শিক্ষাবিদ মহল।
সুশিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। একটি স্বপ্ন বিজয়ী জাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কিছু সুদূরপ্রসারী কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অঞ্চলভিত্তিক ও পার্শ্ববর্তী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, অভিভাবক প্রতিনিধি, সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ এবং স্থানীয় শিক্ষাবান্ধব তরুণ রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। তরুণ শিক্ষার্থীদের মানসিক উন্নয়নে প্রতিটি স্কুলে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে একজন মনোচিকিৎসক।
ভারতবর্ষে পশ্চিমা আধুনিক শিক্ষার অনুপ্রবেশ ইউরোপীয়দের হাত ধরে। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ১৬শ’ শতকের দিকে পাশ্চাত্যের বণিক শ্রেণির লোকেরা উপমহাদেশের এই অঞ্চলে বাণিজ্যের জন্য আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এক কলোনিয়াল উপাদান। তাদের সঙ্গে আসেন পুরোহিত-পাদ্রীগণ। ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে তারা তাদের সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া ও বাণিজ্যিক স্বার্থে স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে ব্যাহত হয়। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাদ্রীদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে চার্চের ব্যবস্থাপনায় কিছু পাঠশালা প্রকৃতির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সময়ের ব্যবধানে ব্যবসায়িক ও ধর্মীয় স্বার্থে ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে তারা স্থাপন করে কলোনি।
কালের স্রোতে ঘাত-প্রতিঘাত মাড়িয়ে ১৮৩০ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। এই নীতিমালার আলোকে ১০ এপ্রিল ১৮৩৫ সালে লর্ড বেন্টিকের নিকট এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বঙ্গঅঞ্চলের জনবহুল শহরগুলোতে ইংরেজি ও বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কিছু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। এ স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঢাকা ও এদঞ্চলীয় জনমানস পটে এক রেনেসাঁ তৈরি হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন ঢাকায়। জ্ঞানপিপাসু বঙ্গদেশীয় যুব সমাজ স্বাদ পেতে শুরু করে পাশ্চাত্যের কলা বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, দর্শন ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের। শিক্ষা যতই এগিয়ে যায়, পাল্টে যেতে থাকে সমাজের চালচিত্র। সে সময়ের গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ড এবং জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন কিছু কেন্দ্রীয় কলেজ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। যে কলেজগুলোতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে উচ্চতর ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেওয়া হবে। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ স্কুলকে রূপান্তর করা হয় কলেজে।
ঢাকা হয়ে ওঠে পূর্ববাংলার ইংরেজি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। সময়ের হাত ধরে জাতির প্রয়োজনে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ অঞ্চলে খুব দ্রুত শিক্ষা বিস্তারের ফলে ঢাকার বাইরে থেকেও ছাত্ররা এ শহরে এসে থিতু হয়। পূর্ববাংলার স্কুল-কলেজ পরিদর্শক দল তাদের এক প্রতিবেদনে (১৮৫৯-৬০) বলেন, ঢাকার স্কুল ও কলেজে যা পড়ানো হয়, তা মানের দিক থেকে লন্ডনের স্কুল-কলেজের সমতুল্য।
ছাত্রদের জ্ঞানের পাঁচটি শাখায় পরীক্ষা দিতে হতো। পড়ানো হতো ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল-প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, গণিত ও নৈতিক শিক্ষা। পাশাপাশি ভারতবর্ষের প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতি মাদ্রাসা ও টোল শিক্ষাও ছিল। তৎকালীন মুসলিম নেতৃবৃন্দের চাপে বৃটিশ সরকার স্কুলের সিলেবাসে আরবি-ফার্সিও অন্তর্ভুক্ত করে। বিষয়গুলোর পড়াশোনার মান ছিল অত্যন্ত উঁচু। সব বিষয়ে ছাত্রদের পাস করতে হতো। কোনো এক বিষয়ে আকৃতকার্য হলে প্রমোশন দেওয়া হতো না। সে সময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো মানরক্ষায় ছিল আপোসহীন। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলোর শিক্ষার প্রতিটি স্তর ছিল আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, ব্রিটিশ বাংলায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার মানের যে ঐতিহ্য ছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশ-জাতির কল্যাণে স্কুলগুলো যেন আবারও তার ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা রাখতে পারে।
বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল ধরেই বাংলাদেশের শিক্ষার প্রায় সর্বক্ষেত্রেই বেহাল দশা। দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা অনিয়মই এখন নিয়ম। সব আমলেই অতি দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতির ফলে মেধাবীদের শিক্ষাবিমুখ করেছে। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলোর শিক্ষার মান ধরে রাখতে বন্ধ হোক কোচিং বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, তদ্বির বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। পদোন্নতিতে বন্ধ হোক জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন। দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে কমিশন গঠন করে তাঁদের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া। মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যবাহী এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই আন্তর্জাতিক মানের মেধাবীদের শিক্ষা জীবনের অভিষেক হয়েছে, যারা আজ দ্যুতি ছড়ায় দুনিয়াজুড়ে।
লেখক : সাংবাদিক
ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলোর মান
শীর্ষ সংবাদ: