ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

বিদেশে চিকিৎসা

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিদেশে চিকিৎসা

প্রতিটি দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে স্বাস্থ্যসেবার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা খাত ব্যাপক উন্নত হয়েছে। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় এখনো স্বাস্থ্যসেবা আশানুরূপভাবে পৌঁছায়নি। সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় শ্রেণি বৈষম্যও প্রকট। গরিব মানুষ সরকারি হাসপাতালমুখী। একটু সক্ষম যারা, তারা বেসরকারি হাসপাতালের সেবা নেন। বিত্তবানেরা হন বিদেশমুখী। চিকিৎসা গন্তব্যে এগিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। একটু সক্ষম যারা তারা চলে যান ইউরোপ-আমেরিকায়।
এক্ষেত্রে দুরাশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর চিকিৎসার নামে বিদেশ চলে যায় ৫০০ কোটি ডলার, যা খুবই ভয়াবহ চিত্র অর্থপাচারের। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে অধিকাংশ উচ্চবিত্তের মাঝে স্বদেশ প্রেমের সংস্কৃতি আজও তৈরি হয়নি। যা জাতির পশ্চাদপদতার একটি কারণ। তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যদি প্রতিবছর ৫০০ কোটি (৫০ হাজার কোটি টাকা) ডলার বিদেশে চলে যায়, তবে সে দেশের স্বাস্থ্য খাত কী করে ঘুরে দাঁড়াবে? প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে সেবা নিয়ে থাকে। যে ৫০০ কোটি ডলার প্রতিবছর বিদেশে চলে যায়, সে টাকা কোন্ খাতে খরচ হয়, তা সুস্পষ্ট নয়। ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশী স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিদেশে গেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। নাগরিকদের এই বিদেশমুখিতা ফেরাতে স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, গ্রাহক সন্তুষ্টি শুধু চিকিৎসা থেকে আসে না, বরং পুরো হাসপাতালের পরিবেশগত উপস্থাপনার মাধ্যমে আসে। স্বাস্থ্যসেবার মানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপোসকামিতা গ্রহণযোগ্য নয়। হাসপাতালের ব্রান্ডিংয়ের জন্য দেশী-বিদেশী আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও ল্যাব বিশেষজ্ঞ দেশে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। এ খাতের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত অবকাঠামো, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বাজেট সহায়তা বাড়ানো আবশ্যক। রোগীদের প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবার প্রতি কম আত্মবিশ্বাস, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা, ডাক্তার ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টির অভাবে তৈরি হয়েছে বিদ্যমান পরিস্থিতি। সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে রোগী ও অভিভাবকদের মানসিক প্রশান্তি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে দেশের অর্থ দেশেই থাকবে। জনগণের আস্থা বাড়বেÑ এমনটি আশা করা যায়। বিদেশগামী স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের দেশমুখী করতে হলে হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যবান্ধব আইনি ব্যবস্থাপনা, ডাক্তার-নার্স ও সংশ্লিষ্টদের আচরণের পরিবর্তন করা গেলে রোগী ও স্বজনদের আস্থা ফিরে আসবে।

×