জুলাই-আগস্ট বিপ্লব উত্তর বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা চোখে পড়ার মতো। ৫ আগস্টের পর নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা অনেকটা ছিল নিষ্প্রভ। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হচ্ছে ভীতি ও আতঙ্ক। চলতি বছরে আগস্ট-ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু রাজধানীতেই ছিনতাই হয়েছে শতাধিক। ঢাকায় ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের বেহাল দশায় নাগরিক জীবন অনিরাপদ ও দুর্বিষহ হোকÑ এমনটি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।
গত এক সপ্তাহে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। ছিনতাইয়ের অভিযোগে উত্তেজিত মানুষের গণপিটুনিতে নিহত হন তিন। ফলে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। গত বছর ৭ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক আদেশে ‘ছিনতাই প্রতিরোধ টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। ইদানীং সংশ্লিষ্টদের শৈথিল্যের কারণে ছিনতাই-ডাকাতচক্রের প্রকোপ বেড়েছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘রাজধানীতে ছিনতাই বেড়ে গেছে। শেষ রাতে পুলিশের যখন ঝিমুনি আসে, সেই সুযোগে দুষ্ট লোকেরা ছিনতাই করে।’ রাজধানীতে এ কু-কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৭ হাজার অপরাধীর তথ্য-উপাত্ত পুলিশের কাছে রয়েছে। পুলিশ ও আদালত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর সময়কালে ৩৪ ব্যক্তি ছিনতাইয়ের শিকার হন এবং ১ জন মারা যান। ছিনতাইকারী কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কিংবা গণধোলাইয়ের শিকার হলে তাদের মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসে অন্যরা। গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেলে তাদের ছাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট আইনজীবী আছেন, যারা বাকিতে তাদের মামলা পরিচালনা করেন। ছিনতাইকারীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আইনজীবীর বিল পরিশোধ করে। এখানে তিনটি বিষয় না বললেই নয়। এক. ছিনতাইকারীদের গ্রুপভিত্তিক ঐক্য। দুই. অপরাধীর পক্ষে বাকিতে আইনি লড়াই। তিন. আইনের ফাক-ফোঁকড় দিয়ে জামিন প্রাপ্তি।
সমাজের যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে। কিন্তু ছিনতাই দুষ্টচক্রের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস সমাজের জন্য শুভকর নয়। আইনি সহায়তা পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার। একজন আইনজীবকে মাথায় রাখতে হবে, অপরাধীর যদি যথাযথ শাস্তি না হয়, তবে সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের সংস্কার করে তা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।
ডিএমপির এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০২০-২৪ সালে ছিনতাই মামলা হয় ১৪১০টি। ছিনতাই করে পালিয়েছে ৮২০। আটককৃত ছিনতাইকারীদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত তরুণ সমাজ। প্রায় ১ হাজার ছিনতাইয়ের ঘটনা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ভাসমান ও উঠতি বয়সী টোকাই শ্রেণির কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাইয়ের জগতে। ছিনতাই-ডাকাতি থেকে রেহাই পাচ্ছে না বরযাত্রীর দলও। এহেন পরিস্থিতি থেকে নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
বেড়েছে ছিনতাই-রাহাজানি
শীর্ষ সংবাদ: