ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

চ্যাটজিপিটি সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে

আজহার মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২০:২৬, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

চ্যাটজিপিটি সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে

মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় প্রযুক্তি নিবিড়ভাবে জড়িত। প্রতিদিন নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার আমাদের জীবনকে সহজ দ্রæততর করছে। তবে প্রযুক্তির এই অভতপূর্ব অগ্রগতি মাঝে মাঝে আমাদের মেধা সৃজনশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তি, বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি। বর্তমানে বিভিন্ন কঠিন কাজ সহজে করার জন্য এআই টুল আবিষ্কার হয়েছে। প্রতিনিয়ত এআই টুল তৈরী হচ্ছে। এটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে শুরু করে প্রবন্ধ লেখা, কোডিং, এবং সৃজনশীল কাজেও পারদর্শী। ফলে, মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই নিজে চিন্তা-ভাবনা না করেই এআই-এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এভাবেই মেধার অবমূল্যায়ন হচ্ছে আমাদের সমাজে। মেধা সৃজনশীলতা ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠছে এই চ্যাটজিপিটি।

আমাদের মস্তিষ্কের মাধ্যমে সৃজনশীলতার চর্চা হয়। সৃজনশীল কাজ, সৃজনশীল লেখা সৃষ্টি হয়। যেকোনো কাজে তখন সৃজনশীলতার ছাপ থাকতো। বলা যায় সৃজনশীলতার চর্চা হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে সেই চর্চা আর হয় না। সেটি এআই টুল ধীরে ধীরে নষ্ট করে দিচ্ছে। মানব সমাজের মস্তিষ্ক হয়ে পড়ছে নিষ্ক্রিয়। একজন লেখক, শিল্পী বা গবেষক যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করে তাদের কাজ সম্পন্ন করে, তখন তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা কল্পনাশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই সমাজ, দেশ। ধরনের প্রবণতা সমাজের নৈতিক মানদÐকে অবনতি করছে এবং একটি আদর্শ সমাজ গঠনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। শুধু তা- নয়, এইসব লেখা দিয়ে দেশ-সমাজের কতটা উপকার হবে সেটা নিয়েও সন্দেহ থাকে।

এই এআই এমনভাবে ব্যবহার হচ্ছে এখন, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও নিষ্ক্রিয় করে তুলবে। এখনকার শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তাদের হোমওয়ার্ক, প্রবন্ধ বা গবেষণাপত্র সম্পন্ন করতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছে। ফলে তাদের গবেষণা করার ক্ষমতা, সৃজনশীলতা এবং বিশ্লেষণ করার দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সহজেই এআই নির্ভর করে কাজ শেষ করতে পারায়, তাদের মেধা দক্ষতার বিকাশ থমকে যাচ্ছে। সহজ সমাধানের কারণে মানুষ নতুন কিছু তৈরি করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। মানুষের ভেতর সেই স্পৃহা একসময় মরে যাবে। এতে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। যে জাতির উদ্ভাবনী ক্ষমতা লোপ পাবে, সে জাতি তত দ্রæ হারিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে কোনো কাজ করে সেই কাজটি নিজের নামে চালানোর প্রবণতাও এক ধরনের চুরি কিংবা অপরাধ। অথচ এভাবে অনেকেই অন্যের কাজ বা ধারণা নিজের বলে প্রচারণা চালায়। যে কাজটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে, নিজের বুদ্ধিতে, নিজের ভাষায় করা হয় সেটিই মূলত সৃজনশীলতা। সেটিই নিজের কাজ হিসেবে সমাজের সামনে উপস্থাপন করা উচিত। যে লেখায় বাক্য গঠন থেকে শুরু করে লেখার আগাগোড়া নিজের সৃষ্টি, সেটিই সৃজনশীল বলে দাবি করা উচিত।  চ্যাটজিপিটি আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মিকা পালন করবে সেটা আপেক্ষিক বিষয়। সময় সেই উত্তর দিয়ে যাবে। চ্যাটজিপিটি থাকা না থাকা নিয়েও বেশ তর্ক-বিতর্ক হতে পারে। তবে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই টুলের এক্সেস সীমাবদ্ধতা করা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরি করা দরকার। পাশাপাশি, ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি, যাতে আমরা নিজের মেধা দক্ষতাকে বিকাশের সুযোগ পাই। পরিশেষে বলতে চাই, ভবিষ্যতে এআই-এর ওপর  অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা আমাদের জন্য চরম বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে লেখক, শিল্পীর জন্য এটি একটি ভয়ংকর ফাঁদ।

 

খুলশী-, চট্টগ্রাম থেকে

[email protected]

×