বছরশেষে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের দিকে ফিরে তাকালে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কী ছেলে, কী মেয়ে তরুণ ক্রিকেটাররাই একের পর এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তাদের লড়াকু মনোভাব এবং হার না মানা জয় দেশবাসীকে আনন্দ দিয়েছে। যদিও পেছন ফিরে তাকালে বিশ^ ক্রিকেটে টাইগারদের সফলতার পাশাপাশি রয়েছে বড় ধরনের ব্যর্থতাও। প্রথম দল হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হারের ‘সেঞ্চুরি’র রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল গত মে মাসে। হিউস্টনে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শততম হারের স্বাদ পায় তারা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচ হারের আগেও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারের তালিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের (৯৯) চেয়ে পিছিয়ে ছিল। আসা যাক বিশ^কাপের কথায়।
দেশবাসীর আশা ছিল, বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেট দল বিশ^কাপ টি-টোয়েন্টিতে ভালো করবে। তারা যে একেবারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে, এমন নয়। তবে টাইগাররা চমক দেখাবে, সুপার এইটে দারুণ লড়াকু খেলা হবে, বলা যায় না শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালও খেলে ফেলতে পারে। যদিও আমরা টাইগারদের সর্বশেষ লজ্জাকর সিরিজ পরাজয়ের পর এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে খোলাখুলিই জানিয়েছিলাম যে, বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে ভালো কিছু করবে, এমন আশাবাদী হতে ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ^কাপে টাইগাররা চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিলে আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে কিছু গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েছিলাম। লিখেছিলামÑ ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সামনের দিকে যেতে হলে সবকিছুর আগে খেলোয়াড়দের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। ‘আমরা পারি, আমরা জিতব’Ñ এই লড়াকু মনোভাবের অধিকারী হতে হবে তাদের।’ দ্বিতীয়ত, ক্রিকেট বোর্ড তথা টিম ম্যানেজমেন্টের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সব স্তরেই পুনর্গঠন করা চাই। আনন্দের বিষয়, গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে সরকার বিদায় নিলে ক্রিকেট টিম ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন আসে। ফলে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়। তরুণদের জায়গা বাড়ে দলে। ফলে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ এবং তারুণ্যের জয় অব্যাহত থাকে। সর্বশেষ, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাইয়ের মাধ্যমে এরই সত্যতা প্রমাণিত।
বিজয়ের মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দাপটের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে টি-২০ সিরিজে ধবলধোলাই করে জাতিকে আবারও বিশ্বসভায় গৌরবান্বিত করল। কিংস্টন আরান ডেল স্টেডিয়ামে জয়ের নেশায় উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ প্রথম ব্যাটিং করে পেয়েছিল ১৮৯/৭। তুখোড় ফর্মে থাকা বোলিং ইউনিটের মোকাবিলায় বিপর্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০৯-এ গুটিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ৮০ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজে ধবলধোলাই অর্জন করে। দুবারের টি-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং বর্তমানে আইসিসি টি-২০ র্যাঙ্কিংয়ে ৪ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ দল এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-২০ সিরিজ জয় দূরের কথা, একটি ম্যাচও জয় করতে পারেনি।
ছেলেদের ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জেতার পর এবার মেয়েদের ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দল নেপালকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে। অবশ্য শিরোপানির্ধারণী লড়াইয়ে বাংলাদেশ দল হেরে গেছে ভারতের কাছে ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে। প্রত্যাশা পূরণ হলো না শেষ পর্যন্ত । আমাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্য যদি হয় বিশ^কাপ জয়, তবে অনূর্ধ্ব ১৯ বয়সীদের যাচাই-বাছাই করে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। একইভাবে বর্তমান জাতীয় দলের তরুণদের পার্ফরমেন্স বিবেচনায় নিয়ে সেরাদের বিশেষ পরিচর্যা ও প্রণোদনা দরকার। যেটি হতে হবে বিশ^কাপ শুরু হওয়ার ছয় মাস আগে থেকে।
ক্রিকেটে তারুণ্যের জয়
শীর্ষ সংবাদ: