বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার সংবাদটি নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। এ ঘটনায় মাসুদের আরও দুই সহপাঠী আহত হয়েছেন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাস্থল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৩০০ ফিট কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের নীলা মার্কেটের সন্নিকটে পুলিশের তল্লাশি চৌকি। মাসুদ দুই সহপাঠীসহ বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় নীলা মার্কেট এলাকায় খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ফিরছিলেন মোটরসাইকেলে। ফেরার পথে পুলিশ তল্লাশি চৌকিতে মোটরসাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন তাদের। এ সময় হঠাৎ পেছন থেকে একটি প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলটিকে প্রচণ্ড ধাক্কা দেয়। ফলে ঘটনাস্থলেই মুহতাসিম মাসুদ নিহত হন। আহত হন অপর দুজন।
পুলিশ সদস্যরা প্রাইভেটকারের আরোহী তিনজনকে আটক করেছে। এই তিনজনও শিক্ষার্থী। ডোপ টেস্টে (মাদক পরীক্ষা) প্রাইভেটকারের আরোহী তিনজনের মধ্যে দুজনের শরীরে গাঁজা ও মদের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে আছেন প্রাইভেটকারের চালকও। ফলে ধারণা করা যায় যে, প্রাইভেটকারের চালক ছিলেন নেশাগ্রস্ত, বিভ্রান্ত ও বেপরোয়া। ঘটনার পর মুহতাসিমের বাবা সড়ক পরিবহন আইনে মামলা দায়ের করেছেন রূপগঞ্জ থানায়। ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মাসহ পরিবারটি এখন হতবিহ্বল ও দিশেহারা। এক প্রতিক্রিয়ায় বাবা বলেছেন, আমি ছেলে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পুলিশ প্রাইভেটকারের আরোহীদের ৫দিনের রিমান্ড চেয়ে সোপর্দ করেছেন আদালতে। ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় স্বভাবতই উত্তাল ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বুয়েট ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। এক প্রতিবাদ সমাবেশে তারা পাঁচ দফা দাবিসহ মুহতাসিমের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে ‘সর্বোচ্চ শাস্তির’ দাবি জানিয়েছেন। নিহতদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দাবিও রয়েছে।
দেশে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। ঝরে পড়ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। অনেকেই বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব নিয়ে কষ্টে ভুগছেন সারাজীবন। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৫৯৮ জন মারা গেছেন। গত সাড়ে ৫ বছরে রাজধানীতে ১ হাজার ২২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬১ জন নিহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, নিয়মিত ডোপ টেস্ট না করা, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এসবের যথাযথ প্রতিকার না হলে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত
শীর্ষ সংবাদ: