কোনো একসময়, বলা চলে সুদূর অতীতকালে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হতো নেতিবাচক কারণে। তাতে বিশ্ববাসীর মনে করুণারই জন্ম হতো। বাংলাদেশের সে ভাবমূর্তি আর নেই। এখন একাধিক কারণেই ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং বিশ্ববাসীর আগ্রহ বাড়ছে বাংলাদেশের প্রতি। কিছুটা বিস্ময় জাগানো হলেও দেশের জন্য বিশেষ গৌরবের সংবাদ হলো বিলেতের বিশ্বখ্যাত সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের বর্ষপরিক্রমার তালিকায় ‘চব্বিশের’ বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নির্বাচন করা। এক যুগের বেশি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। নিহত ৬ লাখের মতো মানুষ। স্বৈরশাসনের পতনের দাবিতে শুরু হওয়া সেই দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের শেষমেশ অবসান ঘটেছে। এ মাসেই সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে হটিয়ে দেশটির শাসনভার গ্রহণ করেছেন বিদ্রোহী ইসলামপন্থি যোদ্ধারা। আসাদের দুই যুগের নিষ্ঠুর শাসনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও লাখো মানুষ। তবে, সেই সিরিয়াকেই টপকে চব্বিশের (২০২৪ সাল) বর্ষসেরা দেশের মুকুট বাংলাদেশের।
বিদায়ী বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও নতুন লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করার বিষয়টিই বাংলাদেশকে তালিকার শীর্ষে নিয়ে এসেছে। বর্ষসেরা দেশের তালিকাসংবলিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেরা ধনী, সবচেয়ে সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারী এমন সব বিবেচনায় নয়; বরং গত ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে, সেই বিচারে সেরা দেশ নির্বাচন করা হয়েছে। সেরা দেশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদদাতাদের মধ্যে জোরালো বিতর্ক হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরে বর্ষসেরা দেশ নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। রানারআপ সিরিয়া। উল্লেখ্য, এ বছর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ও সিরিয়া ছাড়াও অন্য দেশগুলো হলোÑ পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সম্পর্কে দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, ‘আমাদের বিজয়ী বাংলাদেশ, তারাও এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। গত আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশটিকে ১৫ বছর ধরে শাসন করেন। দেশের স্বাধীনতার একজন নায়কের কন্যা হাসিনা। একসময় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরে দমনপীড়ন শুরু করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি করেন, বিরোধীদের কারাগারে ভরেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তাঁর আমলে বিরাট অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের তালিকায় স্থান পাওয়া অবশ্যই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। সেরা দেশ হিসেবে পরিগণিত হওয়া মানেই বিশ্বনেতাদের দৃষ্টিতে আরও বেশি সমীহ জাগাবে বাংলাদেশ। বিশ্বের শত দেশের কোটি সচেতন নাগরিক বাংলাদেশকে চিনবে নতুনরূপে। ফলে শুধু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হওয়া কিংবা মানুষের মনে বিশেষ সম্মানের উদ্রেক হওয়াই নয়, এর ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের নতুন অগ্রযাত্রাও প্রভাব রাখবে। অর্থনৈতিক নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেটি বিনিয়োগকারীদের কাছে আলাদা মনোযোগ লাভ করবে। তাই এখনই সময় শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সংকটসমূহ নতুন করে তুলে ধরা। এর পাশাপাশি বিপুল সম্ভাবনার দিকগুলোও কার্যকরভাবে উপস্থাপন করা চাই, যাতে শিল্প-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যসহ বাংলাদেশের বহুমুখী সফলতা ও গৌরবের বিষয়গুলো বিশ্বনাগরিকদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলতে সমর্থ হয়।
বিশ্বে বর্ষসেরা বাংলাদেশ
শীর্ষ সংবাদ: