ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

স্বৈরাচার থেকে সংকট ও গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

স্বৈরাচার থেকে সংকট ও গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশ

রহমান মৃধা

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এক গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসন, তার দমনমূলক আচরণ, ক্ষমতার অবাধ ব্যবহার এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার অপকর্ম আজ দেশটির সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মানবিক মূল্যবোধের উপর ভয়াবহ আঘাত হেনেছে। 

২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটি একটি একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ অক্ষুন্ন হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার শাসন শুধু অতীতের স্বৈরাচারী সরকারগুলির শাসনের তুলনায় আরো অত্যাচারী নয়, বরং এটি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ও জনগণের জীবনমানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আধিপত্য ও ক্ষমতার লালসা:

মানুষের মধ্যে আধিপত্য এবং ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক সমস্যা। ক্ষমতার লোভ এবং এর অপব্যবহারের ফলে যে সামাজিক অবক্ষয় ঘটে, তা একদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নৈতিকতাকে ধ্বংস করে এবং অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। শেখ হাসিনার সরকারের কর্মকাণ্ডে আমরা দেখতে পাই, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কৌশলগতভাবে বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনিক যন্ত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে জনগণের ন্যায্য অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়েছে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা, গুম, খুন এবং ভুয়া মামলার মাধ্যমে তাদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।

এই দুর্দশার মূল কারণ হলো ক্ষমতা ও আধিপত্যের লোভে শেখ পরিবার দেশের শাসনকে একনায়কতন্ত্রে পরিণত করেছে। এসব অপ্রিয় সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। শেখ পরিবার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে জনগণের মৌলিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, যার ফলে দেশের অর্থনীতি ও সমাজে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। জাতির পিঠ যখন দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছিল, তখন শিক্ষার্থীদের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সহযোগীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এসব ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, শেখ পরিবার জাতির জন্য একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের ভূমিকা ও ষড়যন্ত্র:

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও কৌশলগত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এই সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের বর্তমান বিজেপি শাসিত প্রশাসনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তিস্তা নদীর পানি-বণ্টন চুক্তি বছরের পর বছর ঝুলে থাকা, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড, এবং ভারতের ব্যবসায়িক আধিপত্য দেশের জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তি এবং সহযোগিতা বারবার একতরফাভাবে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পানি-বণ্টন সমস্যা, সীমান্তে বিএসএফের হাতে নাগরিক হত্যার মতো বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী হলেও, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ভারতকে ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টি এবং জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর কৌশল। ভারতীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈরিতা এবং বিভক্তির শেকড় আরও গভীর হয়েছে। একদিকে, এ ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ধ্বংস করছে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের কাছে বিভ্রান্তিমূলক বার্তা পাঠাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি হুমকি তৈরি করেছে। তিস্তা চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সঠিক কূটনৈতিক অবস্থান নিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতাকে জনগণ আর উপেক্ষা করতে রাজি নয়। এখন সময় এসেছে এই সমস্যাগুলোর সমাধান ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় একটি ঐক্যবদ্ধ, দূরদর্শী এবং সাহসী নেতৃত্ব প্রদর্শনের।

শেখ হাসিনা সরকার ও প্রশাসনিক অত্যাচার:

শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের শাসনামলে দেশের রাজনীতি ও প্রশাসন কার্যত একটি ব্যক্তিগত স্বার্থকেন্দ্রিক কাঠামোতে রূপ নিয়েছে। সংবিধান ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করে তারা একটি একক দলীয় শাসনব্যবস্থার ভিত গড়ে তুলেছে। নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, বিরোধী দলের দাবিগুলো বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে। বরং, সেনাবাহিনী, পুলিশ, এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ এবং ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে সরকার সচেষ্ট থেকেছে। এ ধরনের শাসনব্যবস্থা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে এবং প্রশাসনিক অবিচারের এক ভয়াবহ চিত্র তৈরি করেছে। এর প্রভাব নিম্নলিখিত কয়েকটি প্রধান ক্ষেত্রে স্পষ্ট-

১. গণতন্ত্রের অবক্ষয়: নির্বাচন ব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কার্যত বিলুপ্ত হয়েছে, এবং প্রতিটি নির্বাচন শাসকদলের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।

২. অর্থনৈতিক সংকট: দুর্নীতি, কালোটাকা পাচার, এবং সরকারি সম্পদের অপব্যবহার দেশের অর্থনীতিকে একটি অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে গেছে। এই সংকট সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মানকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

৩. মৌলিক অধিকার হরণ: মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, এবং মানবাধিকারের প্রতি আঘাত প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। ভিন্নমত পোষণকারীদের উপর নিপীড়ন, গুম, এবং কারাদণ্ডের ঘটনা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৪. বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার: বিচার বিভাগ সরকারের প্রভাবমুক্ত হতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে  জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সংকুচিত হয়েছে। বিচার বিভাগ এখন ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থরক্ষায় পরিণত হয়েছে, এবং এতে দেশের আইনগত সিস্টেমের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়েছে। এই পরিস্থিতি শুধু জনগণের জন্য হতাশাজনক নয়, বরং এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। পরিবর্তন আনতে অবিলম্বে সুষ্ঠু নেতৃত্ব, গণতান্ত্রিক সংস্কার, এবং শক্তিশালী নাগরিক ঐক্য প্রয়োজন।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা: ফিউচার ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ:

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মই দেশকে একটি নতুন আলোর পথে নিয়ে যেতে পারে। বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, অপরিহার্য। নতুন প্রজন্মের জন্য তথ্যপ্রাপ্তি, সচেতনতা, এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দুর্নীতি দূরীকরণ, এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এখন অসীম শক্তি ও সম্ভাবনা রয়েছে, যা একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি গড়তে পারে। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা, নৈতিকতা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেশের ভবিষ্যৎকে একটি ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারে।

ফিউচার ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ:

এই প্রজন্মের স্বপ্ন ও শক্তিকে সংগঠিত এবং দিকনির্দেশিত করতে ফিউচার ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি একটি এমন প্ল্যাটফর্ম হতে পারে যেখানে তরুণরা তাদের দক্ষতা, আদর্শ এবং উদ্যমকে একত্রিত করে দেশের জন্য কাজ করতে পারবে।

১. শিক্ষা ও সচেতনতা: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, এবং ইতিহাসের সঠিক তথ্য তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ফাউন্ডেশন একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে।

২. দূরদর্শী নেতৃত্ব গঠন: তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ তৈরি করতে হবে। নতুন নেতৃত্বই বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মানচিত্রে গৌরবের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারে।

৩. গণজাগরণ এবং একাত্মতা: দেশকে অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। একটি শক্তিশালী গণজাগরণ তৈরি করার জন্য এই ফাউন্ডেশন একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে পারে।

আশার সুর:

এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তরুণদের প্রতি আস্থা ও প্রত্যাশা অটুট। সময় এসেছে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে দেশকে একটি সুশৃঙ্খল, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করার।

একটি ঐক্যবদ্ধ ডাক:

ফিউচার ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ কেবল একটি নাম নয়, এটি হবে পরিবর্তনের প্রতীক। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা বাংলাদেশের তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করবে, তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলবে, এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথকে প্রশস্ত করবে। তরুণদের হাতেই দেশের ভাগ্য। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক সমাজ তৈরি করতে পারি। এখনই সময়, নতুন সূর্যোদয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা:

শেখ হাসিনার সরকারের দীর্ঘমেয়াদী দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছেছে। এই অস্থির পরিস্থিতিতে, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং জনগণের মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য:

১. স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা: দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন নির্ভয়ে এবং স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে পরিবেশ তৈরি করা।

২. গণতান্ত্রিক কাঠামোর সংস্কার: এমন একটি টেকসই ব্যবস্থা গঠন করা, যা ভবিষ্যতে একনায়কতন্ত্র বা ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ পুরোপুরি রোধ করবে।

৩. প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা: বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে কার্যকর ও ন্যায়সংগত প্রশাসন নিশ্চিত করা।

৪. মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

৫. গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করা: সংবিধান এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ভবিষ্যতের জন্য গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করা। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সকল অংশের জনগণকে একত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের একটি উদাহরণ তৈরি করছে। এটি কেবল সংকট মোকাবিলার একটি পথ নয়, বরং একটি নতুন গণতান্ত্রিক, মানবিক, এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি।

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যার দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি রয়েছে, তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি কার্যকর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক এবং মাইক্রোক্রেডিট মডেল বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছে। ড. ইউনূসের মতো একজন স্বীকৃত এবং আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিত্বের নেতৃত্ব এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি করেছে। তার দীর্ঘদিনের কাজ, যা মানবিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সুশাসন এবং সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, তাকে এই দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ যোগ্য করে তুলেছে।

বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে ড. ইউনূসের নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর সংস্কার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধার করবে।

আশা ও ভবিষ্যৎ:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক এবং মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। দীর্ঘদিনের দমনমূলক শাসনের পর দেশের মানুষ নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। ক্ষমতার লোভ এবং অন্যায়ের অবসান ঘটিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়া এখন সময়ের একমাত্র দাবি।

এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে এবং জাতি উন্নয়নের পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে জাতি আবারও প্রমাণ করতে প্রস্তুত যে, সংকট যত গভীরই হোক না কেন, ঐক্যবদ্ধ ইচ্ছাশক্তি এবং সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সবকিছুই সম্ভব।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, এবং একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের ঐক্যই হবে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বাংলাদেশ প্রমাণ করবে যে সংকট কেবল বিপর্যয় নয়, এটি জাতির নতুন সূর্যোদয়েরও পূর্বাভাস।

গবেষক ও লেখক: রহমান মৃধা
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
[email protected]

এম হাসান

×