ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১

আইএমএফ ও অর্থনীতি

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

আইএমএফ ও অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চতুর্থ কিস্তিতে সাড়ে ৬৪ কোটি ডলার দিচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে বলেছে, অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। সংস্থাটি মনে করছে, বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে শ্লথ হয়ে পড়েছে। ফলে চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে যে আগামী অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনীতি চাঙা হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হবে। চলতি বছরে মূল্যস্ফীতি বার্ষিক ভিত্তিতে ১১ শতাংশে থাকলেও আগামী অর্থবছরে তা দ্রুত কমে আসবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে দাঁড়াবে বলে সংস্থাটি মনে করছে। এর আগে আইএমএফ বলেছিল, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অক্টোবরে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এমন প্রাক্কলন করা হয়েছিল। আরও আগে চলতি অর্থবছরের জন্য আইএমএফের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য, বিগত সরকারের আমলে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় বাড়তি রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা জানতে চাওয়ার পাশাপাশি ভ্যাট বিভাগ ও কাস্টমসের সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন বা ইন্টিগ্রেশনের ওপর জোর দিয়েছিল আইএমএফ। দেশের ব্যাংকিং খাত বিশেষ করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে বিপুল সংস্কারের পরামর্শও দিয়েছিল আইএমএফ। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আইএমএফ খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে বললেও এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকার দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠানই কার্যত ঋণ খেলাপি। খেলাপি ঋণ আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক হয়নি বলেই দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসেনি। সে কারণেই আইএমএফ আজ বলতে পারছে অর্থনীতি শ্লথগতি হয়ে পড়েছে।
চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে তৃতীয় পর্যালোচনা করতে আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি দলের সাম্প্রতিক সফরের শেষে বুধবার আইএমএফের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় করতে সংস্থাটি বাংলাদেশের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি সংস্থার নির্বাহী বোর্ডে উঠবে।
বাংলাদেশ চলমান ঋণ কর্মসূচির আকার আরও ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছে। এর ফলে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) এবং বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণের আকার দাঁড়াবে ৪০০ কোটি ডলারে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) কর্মসূচির আওতায় ১৩০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে। এটা বাস্তবতা যে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশ যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তা মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। আশা করা যায়, আইএমএফের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যাবে। কর অব্যাহতি অপসারণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা, বিনিময় হার আরও নমনীয় করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। অন্তর্বর্তী সরকারও এসব বিষয়ে অবগত এবং এ লক্ষ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু হয়েছে। তাই আগামী দিনগুলোয় অর্থনীতিতে আরও গতিসঞ্চার হবেÑ এমনটাই প্রত্যাশিত।

×