ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জনপদ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের বহুমাত্রিক আঘাতে যোগ হয়েছে নানাবিধ সমস্যা। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাই যেন জাতির নিয়তি হয়ে আছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের দৈর্ঘ্য ৭১১ কি.মি. (৪২২ মাইল) উপকূলীয় জেলা ১৯টি। দেশের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী বসবাস করে এই অঞ্চলে। উপকূলীয় ভূমি সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে ১৯৬৬ সালে তৎকালীন সরকার ম্যানগ্রোভ বনায়ন শুরু করে। সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশীদের জীবনে সহযাত্রী হিসেবেই আছে আদিকাল থেকে। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এদেশের দক্ষিণাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। সরকারি হিসাবে ৫ লাখ মানুষ নিহত হয়। যাদের অধিকাংশই বঙ্গোপসাগরে ভেসে যায়। বেসরকারি হিসাবে মানুষ মারা যায় ১০ লাখের বেশি। ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ সালে আরও একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়। ১ লাখ লোকের মৃত্যুর পর দাতাদের সহযোগিতায় সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উপকূলের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় সবুজ বেষ্টনী কার্যক্রম শুরু করে। যার ইতিবাচক প্রভাব উপকূলীয় জীবনধারায় দৃশ্যমান বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব সাধারণত তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলোকেই বহন করতে হয়। উন্নত বিশ্বের ভোগবাদী জীবন দর্শনের বলি হতে হয় প্রবৃদ্ধিতে প্রান্তিক দেশগুলোকে। তাদের কার্বন নিঃসরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় উন্নত বিশ্ব যে সহায়তা করছে তা যথাযথ ব্যবহার না করার ফলে তহবিল কমে যাচ্ছে। জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের দেশীয় বাস্তবতায় প্রস্তুতি ও জ্ঞানভিত্তিক আন্তর্জাতিক বলয় গঠনে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জলবায়ু কূটনীতির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ডিপ্লোমেটিক নেগোসিয়েশন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই দরকষাকষি করা যায় না। পেশাদার কূটনীতিক এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ও পরিবেশ কর্মীদের সমন্বয়ে যদি জবাবদিহিতাপূর্ণ এক বা একাধিক টিম গঠন করা যায় তবে এর ইতিবাচক প্রভাব অচিরেই দৃশ্যমান হবে। বাংলাদেশের সার্বিক প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। যা দেশের গণমানুষের জন্য অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী করপোরেট গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় নদী ও খালের জায়গা দখল, কৃষি জমি নিধন যা গত অর্ধশতাব্দীকাল ধরে চলে আসছে অবলীলায়। দেশের উপকূলীয় ভৌগোলিক সীমার সুরক্ষায় এবং আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে এখনই লাগাম টেনে ধরা ও বাস্তবতার নিরিখে আইনের যথাযথ সংস্করণ এবং তা বাস্তবায়নে নজরদারি বাড়ানো। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে মোট বায়ুদূষণের ৩০ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে। ২৮ শতাংশ দূষণ উৎপাদন হয় বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে। ১৩ শতাংশ দূষণ হয় ধুলাবালি থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ থেকে ক্লাইমেট ডিপ্লোমেসিকে আরও শাণিত করে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে গরিব দেশগুলোকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব।