শিক্ষা ব্যবস্থা একটি জাতির মৌলিক ভিত্তি। এর শক্তি ও স্থায়িত্ব দেশের সকল প্রকার উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরি। শিক্ষা ব্যবস্থা যদি স্থিতিশীল ও সুশৃঙ্খল হয়, তাহলে দেশ ও জাতি দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষা শব্দটি প্রায় একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন ধাপে অসংগতি পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির প্রভাব দেখা দেয়। শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য যেখানে ছাত্রদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করা, সেখানে তা প্রায় ব্যক্তিস্বার্থ ও পরিবার স্বার্থে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ছাত্রদের পড়ালেখার মান কমে যায় এবং ছাত্রদের মাঝে তাদের যে প্রত্যাশা তা তারা খুঁজে পায় না। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ নেই।
এই সংস্কারের সূচনা হতে পারে তৃণমূল থেকে। তৃণমূল শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে ছাত্রদের সবচেয়ে প্রাথমিক স্তরকে বোঝায়। এটি প্রায় ইবতেদায়ী বা প্রায় মারি লেভেল, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক থেকে শুরু হয়। এখান থেকে ছাত্রদের ভিত্তি গড়ে ওঠে এবং ভবিষ্যত জীবনের বিকাশ ঘটে। প্রায় মারি লেভেলের এই শিক্ষা নিয়ে ছাত্রদের মনে দৈনন্দিন এই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করে। তাই তৃণমূল শিক্ষা ব্যবস্থা একটি রাষ্ট্রের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটি হলো সেই স্তর, যেখানে ছাত্রদের প্রকৃত চাহিদা সমস্যা এবং আশা আকাঙ্খাসমূহ ফুটে ওঠে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও মৌলিক জ্ঞান চর্চার অনেক অভাব রয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্রীভ‚ত করণ, অর্থের প্রভাব এবং প্রভাবশালীদের আধিপত্য তৃণমূল শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দেখা যায়, মৌলিক শিক্ষা ব্যবস্থার বদলে এমন সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত, অথচ তাদের প্রণীত সিলেবাসের জনপ্রিয়তা যা মৌলিক জ্ঞান বিকাশে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে যখন শিক্ষা সংস্কার হয়, তখন ছাত্রদের প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে যায়।
একটি বাড়ির খুঁটি যদি দুর্বল হয়, তাহলে ওই বাড়ি কখনো মজবুত হতে পারে না। একইভাবে, যদি তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষা যদি মজবুত না হয়, তাহলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তৃণমূল শিক্ষায় দুর্বলতার কারণে উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়ে ও অনেককে হিমশিম খেতে হয়। তাই, তৃণমূল থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে আমরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি। শিক্ষা সংস্কারের প্রথম ধাপ হতে হবে ইবতেদায়ী বা প্রায় মারি লেভেলের শিক্ষাকে স্বচ্ছ করা। তৃণমূল পর্যায়ে মৌলিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাব বাড়াতে হলে প্রাইমারি লেভেলে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করা ছাত্রদের নিয়োগ দিতে হবে। এতে ছাত্ররা প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা ক্ষেত্রে আর ও সজাগ হবে এবং তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের ভিত্তি ও মজবুত হবে।
তৃণমূল পর্যায়ের সংস্কারের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানকালে আর্থিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের মধ্যে ছাত্রদের মানুষ হিসেবে তৈরি করার মন মানসিকতা থাকতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের পেশায় যারা থাকবেন, তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট নৈতিক নীতিমালা থাকা উচিত। ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ছাত্রদেরকে তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ছাত্ররা যদি সচেতন হয় এবং সঠিক পরিচর্যায় গড়ে ওঠে, তাহলে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষার স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
তৃণমূল থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার শুরু হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাতে একটি দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে যোগ্য ছাত্র তৈরি হলে, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে দুর্নীতির পরিমাণ অনেক কমে আসবে এবং একটি সুন্দর প্রজন্ম গড়ে ওঠবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে শিক্ষাব্যবস্থার অস্থিরতা, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার একটি বড় সমস্যা, সেখানে তৃণমূল পর্যায়ের সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া সহজ নয়, তবে এটি একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ এবং ন্যায়নিষ্ঠা আদর্শবান মানুষ প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পরিশেষে, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার শুরু করার জন্য আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত তৃণমূল শিক্ষাকে শক্তিশালী করা। ছাত্রদের সাথে বইয়ের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে এবং একটি স্থিতিশীল ও উন্নয়নমুখী শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। তৃণমূল থেকে সংস্কার শুরু করা হলে দেশ শুধু শিক্ষিত প্রজন্ম পাবো না, সাথে আরও পাবে সুশিক্ষিত একটি জাতি। যার মাধ্যমে সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে আমার দেশ।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ