এ বছর সবচেয়ে ঘটনাবহুল জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর টানা দ্বিতীয় দফায় এবার আরও একটি তেলসমৃদ্ধ দেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ থেকে ২২ নভেম্বর দুই সপ্তাহব্যাপী ২৯তম জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করতে গিয়ে নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে ‘গিফট অব গডের’ তেলসমৃদ্ধ দেশটি। দায়িত্ব পাওয়ার পর আয়োজক কমিটিতে কোনো নারী সদস্য না রাখায় সমালোচনার মুখে পড়ে আজারবাইজান। শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক চাপে তারা নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি পুনর্গঠন করে। পরবর্তী ভূ-রাজনৈতিক এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ইস্যুতে নানাভাবে বিতর্কে জড়ায় দেশটি। আয়োজক দেশ নিয়ে বিতর্কের রেশ না কাটতেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ‘পাপুয়া নিউগিনি’ সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দেয়।
আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল বাকু জলবায়ু সম্মেলন হবে অর্থায়নের সম্মেলন। গত কয়েকটি সম্মেলনে আলোচনা পেরিয়ে নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফায়েড গোলের (এনসিকিউজি) আওতায় বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর হয়ে ওঠা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এই সম্মেলনে অর্থায়নের নতুন লক্ষ্য স্থির করার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে বাকু জলবায়ু সম্মেলনকে অর্থায়নের কনফারেন্স অব দ্য পার্টি (কপ) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিলÑ মিটিগেশন বা প্রশমনে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ, প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল-৬-এর আওতায় কার্বন মার্কেট কার্যকর, অ্যাডাপটেশন বা অভিযোজনের আওতায় অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণে গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন অনুমোদন, লস অ্যান্ড ডেমেজের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা এবং জেন্ডার ইস্যুর আওতায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীদের ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত করা।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে সম্মেলনের শীর্ষ এজেন্ডা ছিল অর্থায়ন। কারণ, ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন সম্মেলনে স্বাক্ষরিত কোপেনহেগেন অ্যাকর্ডে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে দেবে। এই অর্থ তারা দেবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। আর ২০২৫ সালের আগেই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নতুন অর্থায়নের লক্ষ্য স্থির করা হবে। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতেও আইনগতভাবে এই প্রতিশ্রুতি সমর্থন করা হয়েছে। ফলে বাধ্যবাধকতা হয়ে পড়ে ২০২৫ সালের আগেই জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্য স্থির করা। এই অর্থায়নের জন্য নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফায়েড গোল (এনসিকিউজি) নামে একটি কাঠামো প্রণয়ন করা হয়। এই কাঠামো প্রণয়নে এনসিকিউজিতে অর্থের সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি। এটি চূড়ান্ত করার জন্য ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনকে নির্ধারণ করা হয়। যদিও কাঠামো প্রণয়নের আলোচনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষ থেকে অর্থায়নের অঙ্ক ১০০ বিলিয়নের স্থলে ৫০০ বিলিয়ন ডলার করার দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছিল। অবশ্য ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কোনো বছরই উন্নত দেশগুলো ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। এ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের অর্থায়নের হিসাব দিয়েছে। সেখানে তারা দাবি করছে, ২০২০ সালে তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১১৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। যদিও এই হিসাবের মধ্যে অনেক গোঁজামিল রয়েছে। আর অর্থায়নের সিংহভাগই এসেছে ঋণ হিসাবে। যেটা অনুদান হিসেবে প্রদানের কথা। এই অর্থ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো খুব কমই পেয়েছে। পেয়েছে ব্রাজিল, ভারতের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলো।
এ অবস্থায় সম্মেলনের শুরুর আগেই জাতিসংঘ তার এক প্রতিবেদনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিবছর কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা জানিয়ে দেয়। জাতিংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু সংকট বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে, তাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিদিন ১০০ কোটি ডলার প্রয়োজন। অথচ এই চাহিদার বিপরীতের দেশগুলো পাচ্ছে মাত্র দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ মাত্র ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফলে এই জলবায়ু সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশ এবং সিভিল সোসাইটির প্রত্যাশা ছিলÑ এনসিকিউজির আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য চাহিদাভিত্তিক অর্থায়নের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে, যাতে থাকবে অনুদান এবং স্বল্প সুদের ঋণ। আর অর্থায়নের যে প্রতিশ্রুতি আসবে তা হবে নতুন এবং বর্তমানে যে সকল প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে, তার অতিরিক্ত। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এবং ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশনের (এনডিসি) বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়নের পৃথক পৃথক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। তাছাড়াও অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর লস অ্যান্ড ডেমেজ মোকাবিলার উদ্যোগ থাকবে। সম্মেলনে বহুপাক্ষিক অর্থ ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়নের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য চাহিদাভিত্তিক ভারসাম্যপূর্ণ অর্থায়নের ব্যবস্থা থাকবে।
এসব প্রত্যাশাকে ঘিরে শুরু হওয়া সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহ ভালোভাবেই কেটেছে। কর্মকর্তা পর্যায়ের আলোচনায় অর্থায়ন নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদার প্রতিফলনও দেখা গেছে। প্রথম সপ্তাহ শেষে অর্থায়ন সংক্রান্ত এনসিকিউজির যে খসড়া দলিল বা টেক্সট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে প্রশমন তথা কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া তথা অভিযোজনের ক্ষেত্রে চাহিদাভিত্তিক অর্থায়নেরই প্রস্তাব করা হয়। খড়সা টেক্সটে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর প্রশমনের জন্য ৪৫৫-৫৮৪ বিলয়ন এবং অভিযোজনের জন্য ২১৫-৩৮৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়নের চাহিদা নিরূপণ করা হয়। অর্থাৎ গড়ে প্রতিবছরের চাহিদা নিরূপণ করা হয় এক দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বা এক লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। এই প্রত্যাশার বিপরীতে দ্বিতীয় সপ্তায় শুরু হয় সম্মেলনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। কিন্তু পুরো সপ্তাহ গড়িমসি করে কাটিয়ে দেওয়া হয়। ফলে আশঙ্কা করা হয়, শেষ পর্যন্ত ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনে অর্থায়ন নিয়ে কোনো চুক্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভব হবে কিনা! আবার এবছর এই চুক্তি না হলে ২০২৫ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন জলবায়ুবিরোধী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে তার আমলে অর্থায়ন নিয়ে আদৌ কোনো চুক্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে গভীর শঙ্কা দেখা দেয়। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো মরিয়া হয়ে ওঠে যে কোনো মূল্যে এই সম্মেলন থেকেই চুক্তিতে উপনীত হতে। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
চরম উত্তেজনা তৈরি হয় সম্মেলনের শেষদিনে শেষ পূর্ণাঙ্গ প্ল্যানারি অধিবেশনে। উন্নত দেশগুলোর হস্তক্ষেপে সম্মেলনে অর্থায়নের যে চূড়ান্ত খসড়া দলিল উপস্থাপন করা হয়, তাতে শুধু বিস্ময় নয়, বিক্ষোভে ফেটে পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে দেখা দেয় চরম বিরোধ। এই বিরোধ তৈরি হয় উন্নত দেশগুলো চাহিদার তুলনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে একেবারেই অপ্রতুল অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব করলে। দুই সপ্তাহের এই সম্মেলনে প্রথম সপ্তাহের আলোচনা শেষে উন্নয়নশীল দেশগুলো আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রতিবছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার চেয়েছিল। কিন্তু এই চাহিদার বিপরীতে উন্নত দেশগুলো মাত্র ২৫০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রস্তাব করে। সেটাও ২০৩০ সালের পরিবর্তে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। উন্নত দেশগুলো তাদের ওই প্রস্তাব নিয়ে অনড় থাকে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো এই অর্থ কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দেয়। ফলে শেষদিন পেরিয়ে রাতভর দরকষাকষি করেও কোনো প্রকার সমঝোতা ছাড়াই আলোচনা ভেঙ্গে যায়।
পরদিন সকালে আয়োজক দেশ আজারবাইজানের হস্তক্ষেপে দফায় দফায় বৈঠক হয়। যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে নেতৃস্থানীয় দেশগুলোকে নিয়ে একটি ক্ষুদ্র গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রিরা যোগ দেয়। এই বৈঠকে আলোচনার পর উন্নত দেশগুলো ২৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩০০ বিলিয়ন করার ইঙ্গিত দেয়। রুদ্ধদ্বার আলোচনা ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবে সম্মত হয়। তবে জাপান, সুইজারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড এর বিরোধিতা করে। শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাব নিয়েই নতুন করে আলোচনার খসড়া দলিল (টেক্সট) প্রকাশ করা হয়।
এদিন বিকেলে পুনরায় অধিবেশন শুরু হলে অর্থায়নের এই প্রস্তাবও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সম্মেলন থেকে ওয়াক আউট করে। শেষ পর্যন্ত তাদের বুঝিয়ে পুনরায় অধিবেশনে ফিরিয়ে আনা হয়। তীব্র বাদানুবাদের পর খসড়া দলিল সংশোধন করে পরদিন ভোরে ট্রিলিয়ন ডলারের আদলে নতুন অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণে সম্মত হয় উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ। এ ব্যাপারে বাকু চুক্তি নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে এই অর্থ প্রদানের সময় আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন ডলার করে দেয়া হবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত।
প্রত্যাশার বিপরীতে প্রাপ্তি হচ্ছে পর্বতের মুষিক প্রসবের মতো। সম্মেলনের প্রতিশ্রুতিমূলক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, বহু উৎস থেকে সংস্থানের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো ২০৩৫ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন ডলার করে দেবে। একই সময় পর্যন্ত অর্থায়নের পরিমাণ এক দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত নিয়ে যেতে কার্বন দূষণের জন্য দায়ী সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও স্বেচ্ছায় এই অর্থায়নে অবদান রাখার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। অপরদিকে, ২০২০ সালের পর্যায় থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক অর্থায়ন তিনগুণ করার জন্য কার্বন দূষণের সঙ্গে জড়িত সকল দেশকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার কিভাবে পাওয়া যাবে তার আউটলাইন তৈরির জন্য ‘বাকু থেকে বেলিম’ রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থায়নের প্রযোজনীয়তা স্বীকার করে নেওয়া হলেও চাহিদাভিত্তিক অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। অভিযোজন এবং লস অ্যান্ড ডেমেজের জন্য পৃথক কোনো লক্ষ্যও নির্ধারিত হয়নি। ববং নতুন উদারবাদ কাঠামোর অনুমোদন করা হয়েছে। অর্থাৎ উন্নত দেশগুলো তাদের ঐতিহাসিক দায় থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং অর্থায়নের জন্য বহুজাতিক অর্থ সংস্থার ওপর নির্ভশীলতা বাড়ানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ঋণকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের পরিবর্তে স্বল্প সুদের ঋণের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো তাদের ঐতিহাসিক দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে।
এবারের সম্মেলনের অবিতর্কিত প্রাপ্তি হচ্ছে কার্বন মার্কেট। প্যারিস চুক্তির বহুল আলোচিত ৬ নং আর্টিকেল কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় রুলবুক ২০২১ সালে গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে অনুমোদন পেয়েছিল। কিন্তু আর্টিকেল-৬ এর চার ধারা অনুমোদন না পাওয়ায় এই মার্কেট কার্যকর করা যাচ্ছিল না। এবার সম্মেলনের শুরুতেই সব দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে একটি বৈশ্বিক কার্বন বাজার তৈরির ব্যাপারে সম্মত হয়। সম্মেলনের চূড়ান্ত অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে এটি অনুমোদন করা হয়। ফলে জাতিসংঘের নির্ধারণ করা সময় থেকে এই বাজারে ‘কার্বন ক্রেডিট’ কেনাবেচা করতে পারবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। দরিদ্র দেশগুলো বৃক্ষরোপণ, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে ‘কার্বন ক্রেডিট’ অর্জন করতে পারবে। অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশগুলোর কমানো কার্বন উন্নত দেশ বা জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো কিনে নিয়ে তাদের হিসাবে দেখাতে পারবে।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম; দৈনিক জনকণ্ঠের নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক