বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাত পোশাক শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয় হলেও সার্বিকভাবে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর স্থানীয় পর্যায়ের (কিশোরগঞ্জ) এক গবেষণায় উদ্বেগজনক এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে গোটা দেশের নারীশ্রম চিত্র এর চাইতে কি বেশি উন্নত? উদাহরণত বলা যায়, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী শ্রমবাজারে যুক্ত হতে পারছেন না। এসব নারী কোনো চাকরিতে ঢোকার চেষ্টাও করেন না। চাকরিতে যুক্ত আছেন মাত্র ১৭ শতাংশ নারী। এর বাইরে যারা আছেন তারাও যুক্ত হতে চান উপার্জনমূলক কাজে। তাতে আয়-উপার্জন করে নিজে যেমন অল্পবিস্তর স্বাবলম্বী হতে পারেন, তেমনি অবদান রাখতে পারেন দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও। দুঃখজনক হলো, এসব নারীর অধিকাংশ বিয়ে করে যুক্ত হন ঘর-গেরস্থালির কাজকর্মে। অনেকেই জড়িয়ে পড়েন কৃষিকাজ, গবাদি পশু পালন অথবা হাঁস-মুরগির খামারে। তাদের এসব কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়নও হয় না। পড়াশোনা, চাকরি বা কোনো প্রশিক্ষণে যুক্ত না থাকা নারীর মধ্যে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীর হার ৭৩ শতাংশ। আর ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীর হার ৩৮ শতাংশ।
প্রায় অধিকারবঞ্চিত এসব নারীর শ্রমবাজারে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করার জন্য সিপিডি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে ‘কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, কর্মদক্ষতা এবং কিশোরী ও তরুণীদের জন্য শ্রমবাজারে যুক্ততার’ লক্ষ্যে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার ওপর। গবেষণা সংস্থাটি সুপারিশ করেছে, দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শ্রম বাজারের কাজে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর। যেমনÑ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত অধিকাংশ নারী শ্রমজীবী প্রধানত স্থানীয়দের বাসায় গৃহকর্মে যুক্ত হন। পরিবর্তে তাদের নার্সিং অথবা ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে মানসম্মত শ্রমবাজারে যুক্ত হতে পারেন।
জনসংখ্যার অর্ধাংশ নারী হলেও উন্নয়নের সব সূচকে নারীর অংশগ্রহণ সমান নয়। কিন্তু পোশাক শিল্প কারখানায় নারীর সক্রিয় ভূমিকা, পোশাক শিল্প খাতকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তা সত্যিই ঈর্ষণীয়। শিল্প কারখানার ইতি এবং নেতিবাচক সবকিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে নারীরা আজ এই খাতকে শুধু বাঁচিয়েই রাখেনি, উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কারখানাগুলোতে নারী-পুরুষের শ্রম এবং সময়ের কোনো তারতম্য না থাকলেও মজুরিতে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। শিল্প-কারখানার অভ্যন্তরীণ নানাবিধ সমস্যা তো আছেই। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এসব শিল্প- কারখানার নারী শ্রমিকের ওপর এক জরিপ চালিয়েছে। এই গবেষণা তথ্যে বেরিয়ে আসে পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন এবং কর্তৃত্বের কাঠামোর এক ব্যাপক রদবদল ঘটেছে। সময়ের দাবিতে এসব সূচকের মানোন্নয়ন দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধির দিকনির্দেশক। নারীরা সমাজে সহিংসতাসহ নানা প্রতিকূলতার শিকার হলেও পারিবারিকভাবে উপার্জনক্ষম নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয় গবেষণালব্ধ এই সমীক্ষায়।
আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমানতালে নারীরা এগিয়ে যেতে না পারলে সার্বিক উন্নয়নের গতিধারা বিঘ্নিত হয়। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরা সমাজ ও পরিবারে তার অবস্থান দৃঢ় করতে সব সময়ই আগ্রহী। এটা সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে গেলে নারী-পুরুষ সবাইকে তার শ্রম, সময়, অর্থ ব্যয় এবং অভিমত ব্যক্ত করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক সাফল্যে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমান অংশীদারিত্ব গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন বিঘ্নিত হবে। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে।
বাড়ুক নারীর অংশগ্রহণ
শীর্ষ সংবাদ: