আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় বাসা ভাড়ায়। নিজে পেট ভরে খেতে পাও বা না পাও, তাতে কিছু যায় আসে না। মাসের শুরুতে বাড়িওয়ালার টাকা দিতেই হবে। শুধু কি এই ভোগান্তি, তার ওপর বছর শেষে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি। বাড়তি ভাড়া দিতে অক্ষম হলে বাসা ছাড়ার নোটিস। অল্প সময়ে বাসা পরিবর্তন, আলাদা মানসিক চাপতো বটে, তার উপর পছন্দমতো বাসা না পাওয়া, বাড়িওয়ালার রুক্ষ আচরণ, জিনিসপত্রের হয়রানি, অনেক সময় বাসা পরিবর্তনের জন্য জিনিসপত্র ভেঙে যায়, আছে বাড়তি খরচ। শুধু কি তাই, নতুন ভাড়া বাসায় নিরাপত্তার বিষয়টিও জরুরি হয়ে পড়ে। বছর বছর বাড়িওয়ালা যদি ভাড়াটিয়াদের সাথে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করতো, তাহলে হয়তো স্বল্প আয়ের মানুষের সমস্যা কম হতো। প্রতিবাদের ভাষাও মাঝে মাঝে মৌনতায় অশ্রুসিক্ত হয়। অন্যের বাসায় থেকে জোর গলায় কথা বললেই সমস্যা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা এটি। পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’মুঠো অন্ন জোগাতে শিকড়কে দূরে রেখে ব্যস্ত শহরে নিজের পথচলা। কখনো অনাহারে কখনো রোদ বৃষ্টি স্নানে নিজেদের সুখগুলো বিসর্জন দিয়ে বাড়িওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিতে হয়।
কখনো আবার বাড়িওয়ালা বিনা নোটিশে নিজেদের স্বার্থে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে থাকেন। এটা কি মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করে? হুট করে যেমন বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না, তেমনি হুট করে বাড়ি ছাড়ার নোটিস দেওয়াও উচিত নয়। কারণ প্রতিটি ভাড়াটিয়া প্রায় দুই মাসের অগ্রিম ভাড়া দিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন। এক্ষেত্রে দু’পক্ষের সমঝোতায় আসা উচিত। বিপদে একজন আরেকজনের পাশে থাকাই মনুষ্যত্বের পরিচয়। বাড়িওয়ালার উচিত প্রতিটি ভাড়াটিয়ার সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া যাতে দু’বছরের আগে বাসা ছাড়তে না হয়। তেমন ভাড়াটিয়ারও উচিত প্রতিটি বাসার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কারণ যখন কোন বাসায় ‘বাসা ভাড়া হবে’ নোটিস ঘনঘন ঝুলিয়ে রাখা হয়, তখন ঐ বাসার বাড়িওয়ালার প্রতি সাধারণ মানুষের একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেকে ভাবতে থাকে এই বাড়িওয়ালা মনে হয় ভালো মানুষ নয়। নাহলে এত ঘনঘন বাড়ি ভাড়ার নোটিশ কেন দেওয়া হয়? তাই দু’পক্ষের সুসম্পর্কে গড়ে উঠতে পারে একটা সুন্দর বাসযোগ্য পরিবেশ।
উত্তরা, ঢাকা থেকে
মোহাম্মদ আলী