ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১

ভাড়াটিয়ার করুণ অভিজ্ঞতা

মো. আখতারুজ্জামান মল্লিক

প্রকাশিত: ২০:১০, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ভাড়াটিয়ার করুণ অভিজ্ঞতা

ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলাতেই ভাড়াটিয়া জীবনের টানাপোড়েন কমবেশি দেখা যায়। এক সময় আমিও ছিলাম ভাড়াটিয়া, এই ভাড়াটিয়া জীবনের অর্ধেক সময় পার করে হয়ে গেলাম বাড়িওয়ালা। ভাড়াটিয়া হয়ে থাকার সময় শেখা প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমার ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। ঢাকার গলির ভেতরের ছোট্ট একটা বাসা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সেখানেই আমার শুরু ভাড়াটিয়া জীবন। শুরুতে দুই মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে উঠেছিলাম। প্রতিমাসের ভাড়া ৫ তারিখের মধ্যেই দেওয়ার চেষ্টা করতাম, তবে মাঝেমধ্যে ভাড়া পাঁচ তারিখের পর হয়ে গেলে বাড়িওয়ালার চেঁচামেচি, তাগাদা কোনোটারই কমতি ছিল না। আবার কিছুদিন পর পরই বাড়িওয়ালা বাসায় ঢুকে প্রতিটা রুমে ঘুরে ঘুরে দেখে বলতেন বাচ্চাদের সাবধানে রাখবেন, বাচ্চারা যাতে দেওয়ালের কোথাও দাগাদাগি করতে না পারে। যখন মন চাইতো তখনই দরজায় ঠকঠক করে নক করতেন বাসা ঠিকঠাক মতো আছে কিনা দেখার জন্য। ভাড়াটিয়া তো, তাই নিজের প্রাইভেসি বলতে কিছুই ছিল না। একবার ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার চিকিৎসার পেছনে প্রচুর খরচ হয়। সেই মাসে ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালার কাছে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার অনুরোধ করলাম। পরবর্তী মাসেও বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু বাসা ছাড়ার উপায়ও ছিল না। তিনি জানালেন, ভাড়া দিতে না পারলে বাসা ছেড়ে দিতে হবে। বছরখানেক পর বাড়িওয়ালা আবার ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিলেন। আগামী মাস থেকে বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে, কথাটা শুনে একটু অবাক হয়ে গেলাম। ভাবলাম, যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে না, কিভাবে যে মাস চালাব আল্লাহই জানেন। বাড়িওয়ালার কথাটি আমার স্ত্রীকে জানালাম, শুনে সেও চিন্তায় পড়ে গেল, কিছুক্ষণ পর বলল দেখো নতুন বাসা খোঁজাখুঁজির ঝামেলা, তাছাড়া বাসা বদলাতে গিয়েও তো অনেক খরচ হয়ে যাবে, মনে হয় বাড়তি ভাড়া দিয়ে এখানে থেকে যাওয়াটাই ভালো, অন্যান্য খরচ কমিয়ে বাড়তি ভাড়া পুষিয়ে নেব। বাসাটি আমাদের জন্য সুবিধাজনক ছিল; স্কুল ও অফিস ছিল কাছাকাছি। ফলে যাতায়াতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হতো। এভাবেই দুটা বছর পার হয়ে গেল হঠাৎ একদিন বাড়িওয়ালা আমাকে জানিয়ে দিল আগামী জানুয়ারি থেকে বাড়িভাড়া বাড়াতে হবে, আমারও অনেক খরচ এই বাড়িভাড়া দিয়ে সামলাতে পারছি না। কথাটা শুনে আমি যেন থমকে গেলাম। সারাবছর দাম বাড়ে সবকিছুর, অথচ আয়ের কিছুই বাড়ে না। ভাড়াটা আবার বাড়তি কেন? নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করি, মাস শেষে যেটুকু বেতন পাই, তা দিয়েই পরিবারের খরচ মেটানো দায়। অন্যদিকে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেভাবে হু হু করে বাড়ছে, সন্তানের স্কুল ফি, ওষুধ সব মিলিয়ে হিসাব কষতে গিয়ে মাথা ঘুরে যায়। এর মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর বোঝা যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ভাড়াটিয়া জীবনের অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে সহানুভূতির প্রকৃত মূল্য। আজ আমি ভাড়াটিয়াদের জন্য যতটা সম্ভব ভালো পরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে আহ্বান জানাই।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা থেকে

মোহাম্মদ আলী

×