বিগত সরকারের আমলে বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বাস্থ্য খাতে একটি জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলেও সেটি কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। দুই বছর আগে বেশ তোড়জোড় করে সরকারি হাসপাতালে চালু করা হয়েছিল বৈকালিক সেবা। সিদ্ধান্ত হয়েছিল নিজ নিজ হাসপাতালে সরকারি বিশেষজ্ঞরা বিকেলে গরিব রোগীদের স্বল্প ব্যয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন। ফলে বিশেষ করে গরিব রোগীরা বিকেলে বেশি অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা সেবা না নিয়ে সরকারি হাসপাতালে নিতে পারবেন উন্নত চিকিৎসা সেবা। ফলে সরকারি হাসপাতালে পাবেন উন্নতমানের চিকিৎসা। এটি নির্দেশনা হিসেবে জারি করা হলেও বাস্তবে কখনোই কার্যকর হয়নি। ফলে সরকারি হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব রোগীরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও নির্দেশনাটি বাতিল করেনি। নির্দেশনা বাতিল না হলেও বাস্তবে দেশের কোথাও সরকারি হাসপাতালে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প শুরুতেই হোঁচট খেয়ে পড়েছে। সাধারণ রোগীদের বাস্তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উচ্চ ফির বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। তদুপরি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছেই।
অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা বর্তমান সরকারের রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে যেভাবে দুর্নীতি হয়েছিল তা নজিরবিহীন। আমরা প্রায় সেই বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। একটু স্বস্তি ফিরলেই ফের কাজ শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে হাসপাতালে বৈকালিক চেম্বার নিয়ে কাজ শুরু করব।
একজন চিকিৎসকের কাছে যখন একজন মানুষ (রোগী) চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন, তখন লিখিত থাকুক বা না থাকুক উভয়ের মধ্যে একটি অলিখিত চুক্তির সৃষ্টি হয়। সেখানে অর্থের বিনিময়ে বা বিনিময় ছাড়াই সেবা প্রদানের বিষয়টি মুখ্য হয়ে ওঠে। এই চুক্তি বলবৎ থাকা অবস্থায় চিকিৎসকের অবহেলার কারণে যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে এ বিষয়ে তার আইনি প্রতিকার লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। আইনি পরিভাষায় ‘মেডিক্যাল নেগলিজেন্স’ বা চিকিৎসায় অবহেলা বলতে মূলত চিকিৎসক ও রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অবহেলাকেই বোঝায়। চিকিৎসায় অবহেলা শুধুই ‘অপারেশন’ বা অস্ত্রোপচারসংশ্লিষ্ট নয় এর বাইরেও রোগীকে সঠিকভাবে পরীক্ষা না করা, রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, ফি নিয়ে দরকষাকষি, ভুল ওষুধ দেওয়া, মৃত রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি রাখা, রোগীর ওপর জোর খাটানো, রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে অন্যত্র প্রেরণ করা, আইনি জটিলতার কথা ভেবে চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে ফেলে রাখা, হাসপাতালের শয্যা খালি না থাকার অজুহাতে চিকিৎসা না দেওয়া, স্বাস্থ্যগত বিষয়ে ভুল রিপোর্ট দেওয়া-এগুলোও চিকিৎসা অবহেলার অন্তর্ভুক্ত। চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণসহ অনেক বিষয়ে ‘দ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেজিস্ট্রেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’-এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও তা মানা হয় না কোথাও। চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি যেমন কারও কাম্য নয়, তেমনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে ভয়ভীতি ছাড়া স্বাধীনভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তেমন পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
মোহাম্মদ আলী