ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১

অবহেলিত সঞ্চয়পত্র

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

অবহেলিত সঞ্চয়পত্র

মধ্যবিত্তসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ জীবনে নিরাপদ বিনিয়োগের খাত সঞ্চয়পত্র। দফায় দফায় ব্যাংকের আমানতের সুদের হার বেড়ে ১৩ শতাংশে উঠলেও গত ৩ বছর ধরে এই সঞ্চয়পত্রে আমানতের হার আটকে আছে ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশে। সঞ্চয়পত্রকে সাধারণ মানুষের জন্য আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে এর সুদের হার ব্যাংকের চেয়ে বেশি রাখার রীতি থাকলেও এ নিয়ে সরকারের আগ্রহ এখন অনেক কম। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার অনাগ্রহ থেকে সুদের হার বাড়াচ্ছে না। ফলে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে এতদিন পর্যন্ত যাদের বার্ধক্যের দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছে, তারা এখন হতাশ। ফলে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের হারও কমেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালুকৃত সঞ্চয় কর্মসূচির (স্কিম) সংখ্যা ১১টি। এগুলোর মধ্যে ৪টি সঞ্চয়পত্র, দুটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসেব, একটি ডাক জীবন বিমা, একটি প্রাইজবন্ড এবং ৩টি প্রবাসীদের জন্য বন্ড। সব কর্মসূচিতে বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার ভিন্ন। যাদের ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগের সুযোগ নেই, তাদের সঞ্চপত্রে বিনিয়োগ করতে হয় ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য।  মেয়াদ পূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। স্কিম ভিত্তিক বর্তমানে সর্বোচ্চ ৩ মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে মুনাফা দেওয়া হচ্ছে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। পূর্ণ মেয়াদে পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক আমানতের সুদ হারের চেয়ে  কম মুনাফা দেওয়া হচ্ছে সঞ্চয়পত্রে। সঞ্চয়পত্রের চেয়ে সরকার প্রদত্ত ব্যাংক ঋণে সুদ বেশি। ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদহার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের বাংলাদেশকে শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দেওয়ার আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমিয়ে বন্ড উৎসাহিত করার পরামর্শ। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা না বাড়িয়ে উল্টো ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত ও অসহায় পরিবারগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে না সরকার। ফলে, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ঝোঁক কম। উল্টো সঞ্চয়পত্রের টাকা ফেরত দিতে চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর। অনেকে বিকল্প বিনিয়োগের পথও খুঁজছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার যুগোপযোগী করা বাঞ্ছনীয়।
এক সময় ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ছিল, তা আর তেমন সচল নেই। অপরদিকে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবিতে অর্থ বিনিয়োগ জটিলতাপূর্ণ হওয়ার কারণে মানুষ এ খাতে বিনিয়োগে তেমন আগ্রহী নয়। একে সহজলভ্য করা হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ত এবং মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হতো। মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্র ছাড়া আপাতত কোনো লাভজনক বিকল্প পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব জনগণের এই অর্থকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবহারের ব্যবস্থা  এবং মুনাফার হার উন্নত করা।

মোহাম্মদ আলী

×