ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকার দিনরাত

হঠাৎ ঢাকা শীতকাতুরে হয়ে পড়ল। দিনের বেলা অবশ্য ঝকঝকে রোদ। এমনিতে ফিবছর অতিথি পাখির মতো দেশে শীত এসেই বলে, যাই যাই। কিন্তু এবার শীতের সঙ্গে ভয়ংকর বায়ুদূষণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাই ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে জমে উঠেছে ফুটপাথে শীতের গরম কাপড়ের পসরা। এবং সেইসঙ্গে চিতই ও ভাপা পিঠার বিকিকিনি। স্বাগত পৌষ।

ক্যাম্পাসে নতুন আইন!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ৭টি প্রবেশ পথে বসেছে বেরিয়ার এবং সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স বক্স। এর মধ্য দিয়ে শুক্রবার যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে ঢাবি ক্যাম্পাসে রিক্সা ও বহিরাগত যানবাহন প্রবেশ একেবারেই সীমিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়দিন পরপরই ‘বহিরাগতদের’ প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্যাম্পাস এলাকায় বাইরের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও তা কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত, দোয়েল চত্বরসহ ক্যাম্পাসের সাতটি প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে এসব এলাকা ঘিরে অনেক সড়কে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়। ছুটির দিনে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত নানা প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি ও নানা কাজে ওই এলাকা অতিক্রম করতে গিয়ে সেই যানজটে আটকা পড়ে। যথাযথভাবে প্রচার না করে হঠাৎ এমন একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করায় জনগণকে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হয়।  
ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষার্থে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বাইরের যানবাহন চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তবে জরুরি পরিবহন, রোগী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অতিথির গাড়ি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দাপ্তরিক কাজে এলে ক্যাম্পাসে ঢোকা যাবে এবং হেঁটে ক্যাম্পাসে ঢুকতে কোনো বাধা নেই। প্রক্টর আরও জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের এই সিদ্ধান্তের কথা বলেছিলেন। যদিও বিষয়টি সেভাবে প্রচার হয়নি। এ নিয়ে সমালোচনা উঠলে শনিবার জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
কথা হচ্ছে শুক্র-শনিবার ছুটির দুদিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি, বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও উদ্যানের ভেতরে উন্মুক্ত মঞ্চে কি কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না? এতে পরোক্ষভাবে নিরুৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি জনসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান গ্রহণ করে বসলো অতশত না বুঝেই? মহানগরীতে এমনিতেই যানবাহনের চাপ এবং মহাযানজট লেগেই থাকে। সেখানে যানজট বৃদ্ধিতে নতুন করে ভূমিকা কেন রাখা হচ্ছে! স্বাধীন চলাচলে বাধা প্রদান নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টিরই নামান্তর।

সমগীত-এর গানেপ্রাণে

ঢাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রচুর। কবিতা-গান-নাটক পরিবেশনে নিবেদিত এসব সংগঠন সমাজ ও সংস্কৃতির জন্য পরোক্ষ অবদান রেখে চলে। বিশেষত তরুণদের বোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও মানস গঠনে সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। সরকারের পক্ষে বা সরকারের বিরোধিতাকারীÑ এমন ঢালাও দুই ভাগে ভাগ করা যাবে না এসব সংগঠনকে। আবার সংগঠনের শিল্পী ও কর্মীরা যে রাজনীতিবিমুখ, এমনটা ভেবে নেয়াও ঠিক হবে না। কাজেই তাদের পরিচয়। কাজ মানে শৈল্পিক পরিবেশনা।
গত শুক্রবার সমগীত-এর গানেপ্রাণে আয়োজন দেখতে গিয়েছিলাম সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে। প্রকৃত অর্থেই আয়োজনটি সমগীতের হয়ে উঠেছিল; আর গানগুলোও প্রাণে এসে বেজেছিল। একক ও দলীয় বিচিত্র গান দিয়ে সাজানো হয়েছিল আয়োজনটি। ভাগ্যচক্রে আমার বাল্যবন্ধু কফিলের দেখা পেলাম এখানে। কফিল এখন ব্যতিক্রমী ধারার সুপরিচিত শিল্পী। নিজে লেখেন, নিজে সুর করেন আর গেয়েও থাকেন নিজস্ব গায়কীতে। জীবনমুখী এসব গান ভালোই শ্রোতৃপ্রিয় হয়েছে। একা না গেয়ে তিনি সমগীত-এর সংগঠকদের ডেকে নিলেন, যার ভেতর বীথি ঘোষ কফিলের প্রধান সহশিল্পীই হয়ে উঠলেন। জাকির হোসেনের গান প্রথম শুনলাম। দোতারা বাজিয়ে গান করেন। ভারি স্বচ্ছ সুন্দর সুরজড়িত কণ্ঠ। তার গানে পেলাম এমন ভক্তিরস, ইহজাগতিকতাকে যা পেরিয়ে যায়। কিশোর ব্যান্ডগানের পাশাপাশি পাহাড়িদের গানদলের গানও পরিবেশিত হলো অনুষ্ঠানে। হৃদয় স্পর্শ করার মতো, ভালো লাগার মতোই ছিল সার্বিক পরিবেশনা। ছায়ানটের শিক্ষিকা লায়েকা বশীরের কথাও বলতে হবে। তিনটি গান গাইলেন তিন ধরনের। রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে শুরু, মাঝে মৌসুমী ভৌমিকের সেই বিখ্যাত গানÑ আমি শুনেছি সেদিন তুমি... এরপর শেষ করলেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে গান দিয়ে- সব ক’টা জানালা খুলে দাও না। একেই বলে দায়িত্বশীল নির্বাচন। তাঁর সুরেলা মিষ্টি গলার পরিশুদ্ধ পরিবেশনার প্রশংসা করি।

আয়োজনটি সমগীতেরই হয়ে উঠেছিল, আর গানগুলোও প্রাণে এসে বেজেছিল

ডিসেম্বরের ঢাকা

গত বছর ডিসেম্বরে ঢাকা কেমন ছিল? যা লিখেছিলাম সেখান থেকে অল্প একটু উদ্ধৃত করছি।
প্রতিবছরই প্রচুর সাংস্কৃতিক উৎসব/অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করেও হয় বিচিত্র অনুষ্ঠান। এবারই ব্যতিক্রম। গান ও চলচ্চিত্র উৎসব কিংবা নাট্যসপ্তাহও হলো না। তার আগের বছরে (২০২২) ডিসেম্বরে ছিল বিশ^কাপ ফুটবল। মধ্যরাতে থাকত খেলা। শীতের বিচিত্র উৎসবে বিশ^কাপ ফুটবল আরেকটি বড় উৎসবের উপলক্ষ হয়েছিল। ঢাকায় বড় পর্দায় যেখানেই খেলা দেখানো হয়েছে সেখানেই মানুষ দল বেঁধে খেলা দেখেছেন। যা হোক, অনেকেই হয়তো বলবেন, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠান/উৎসব নেই অবরোধের কারণে। কিন্তু অবরোধে সব কিছুই তো স্বাভাবিক আছে। অন্তত ঢাকার ভেতরে। দূরপাল্লার বাস কম চলছে, এছাড়া সবই যখন ঠিক আছে তখন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ভাটা কেন? হয়তো মানুষের মনে শঙ্কা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির চাপ এবং আসন্ন নির্বাচনÑ সব মিলিয়ে উৎসবের মনটা নেই। হতে পারে অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজকরা ভাবছেন উদ্যোগ নিলে যদি অনুষ্ঠান সফল না হয়। তবে এমন ডিসেম্বর ঢাকাবাসীর কাছে কিছুটা খাপছাড়াই।

বিজয় দিবসে মহানগরী

সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকে বলতেই হবে এবার ২০২৪ সালের বিজয় দিবসে রাস্তাঘাটে, অলিতে গলিতে উৎসবের দৃশ্যমান প্রকাশ অনেকটা কমই দেখা গেছে। ১৬ ডিসেম্বর সকালে অফিসে আসার সময়ে খুব কম ভবনে ও গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখেছি। মাইকের আওয়াজ তেমন ছিল না বললেই চলে। অথচ অন্য বছর বহু স্থানে মাইকে দেশপ্রেমমূলক গান বাজানো হতো। বহু ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহনে সগৌরবে জ¦লজ¦ল করতো জাতীয় পতাকা। দুপুরে এ লেখা যখন চূড়ান্ত করছি তখন অনলাইনে দেখলাম যে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নেমেছে; মানিক মিয়া এভিনিউতে বাংলাদেশ কনসার্টেও বহু মানুষ যোগ দেয়।
আমরা অতীতে দেখেছি, বিজয় দিবসটিকে রাজধানীবাসী বিশেষ উৎসবের দিনে পরিণত করেছে। পহেলা বৈশাখে যেমনÑ অল্প বয়সীদের উচ্ছ্বল ঘোরাঘুরি লক্ষ্য করা যায়, ষোলোই ডিসেম্বরেও তেমনটি ঘটছে। বিশেষ পোশাকও বেছে নিচ্ছে তারা। শীতকে উপেক্ষা করে ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়েরা শাড়ি পরছে। লাল-সবুজে ডিজাইনকৃত পোশাক যদি নাও হয় তাহলেও তরুণ-তরুণীরা পোশাকে লাল ও সবুজের ছোঁয়া রাখছে। এটি একইসঙ্গে দেশপ্রেম ও সচেতনতা প্রকাশকারী। বেশ একটা প্রাণময় উৎসবের দিনই বানিয়ে ফেলেছে তারা বিজয় দিবসকে। ছুটির দিন হওয়ায় তাদের এই সানন্দ-স্বচ্ছন্দ চলাচল অন্যদের মনেও আনন্দের আভা ছড়িয়ে দেয়। তবে কথা হচ্ছেÑ আনন্দটাই সব নয়, আনন্দের পাশে কিছু কষ্ট সহ্য করার মানসিকতাও থাকা চাই। কষ্ট করে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। যারা তাদের এই আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে এসেছেন সেই দেশপ্রেমিকদের জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকারের প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে এই দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা কাজ করে চলেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সমাজের অসহায় অপারগ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সামান্য হলেও উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই না আনন্দ পুরোপুরি সুখ বয়ে আনবে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিত্তহীন কোনো মানুষের জন্য একখানা শীতবস্ত্র কিনে তাকে উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা নিন, সেইসঙ্গে কাছের বন্ধুটিকেও একই কাজ করার জন্য উৎসাহিত করুনÑ তাহলে বিজয় দিবসের আনন্দে নিশ্চয়ই ভিন্ন মাত্রা যোগ হবে। সেক্ষেত্রে ‘স্বার্থপর’ আনন্দ হয়তোবা ভিন্নতর সুখের সন্ধান পাবে। সত্যিকারার্থেই বেজে উঠবে প্রাণের বাঁশি।
আগেও বলেছি, একুশে ফেব্রুয়ারি ও ষোলোই ডিসেম্বরÑ এ দুটি দিন দুই ঘণ্টার জন্য হলেও প্রতিটি শিক্ষাঙ্গন খোলা রাখা চাই। সুপরিকল্পিত অনুষ্ঠান রাখা চাই। তা না হলে দিবসের মর্যাদা এবং জাতির ইতিহাস-সংস্কৃতির সঙ্গে শিশু-কিশোরদের সংযুক্তি ঘটবে কিভাবে? বিজয় দিবসে যারা পরাজিত পক্ষ ছিল তারা নিজেদের লুকিয়ে রাখবে এই দিনে। যারা বিজয়ী তারা সগৌরবে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেবে, আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবে- এটাই তো স্বাভাবিক।

কবি হেলাল হাফিজ ও শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার

দৃষ্টি আকর্ষণ : পরিবাগ ফুটওভারব্রিজ

বাংলামোটর পেরিয়ে শাহবাগের দিকে গেলে পরীবাগের কাছে যে ফুটওভারব্রিজ বা পদচারী সেতু রয়েছে, সেটি দিনে দিনে উন্মুক্ত পাবলিক টয়লেট হয়ে গেছে। এতে আর মানুষ ওঠেন না। পরিত্যক্ত ঘোষণা তো করা হয়নি! তাহলে সেতুটির এই বেহাল দশা কেন? মলমূত্রের গন্ধে এটির পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে বমির উদ্রেক হবে। অথচ এটির পাশ দিয়েই মানুষকে ঢুকতে হবে পরীবাগে। পরীর মতো একটি দারুণ বিষয় যুক্ত যে এলাকার সঙ্গে, সেটির এই বেলাজ করুণ দশা কেন?

কবি ও কণ্ঠশিল্পীর বিদায়

আমাদের শিল্পীসভা ও কবিতাঙ্গনকে হতবিহ্বল করে চোখের আড়াল হলেন দুই গুণীজনÑ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার ও কবি হেলাল হাফিজ। নিয়তির এই যুগল আঘাতে আমরা শোকগ্রস্ত। ব্যাধি দংশিত ছিলেন দুজনই। বয়সও হয়ে গিয়েছিল। তবু উভয়ের মৃত্যু জাতির জন্য অকাল প্রয়াণস্বরূপ। এমন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী ও কবি যুগে যুগে জন্মগ্রহণ করেন না।
শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার তাঁর ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ঐশ^র্য, গায়কী এবং শুদ্ধতার জন্য অল্পকালের ভেতরেই রবীন্দ্রসংগীত বোদ্ধাদের সমীহ অর্জন করেছিলেন। সব বয়সী সংগীতপ্রেমীদের মাঝে প্রিয় হয়ে ওঠেন। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের যে ক’জন শিক্ষার্থী রবীন্দ্রনাথের দীক্ষায় বিশেষ উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্জন করতে যান, পাপিয়া সারোয়ার ছিলেন তাদের একজন। অবশ্য তারও আগে গানের পাখি পাপিয়া দেশের শীর্ষ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাগুরুদের কাছেও তালিম গ্রহণ করেছিলেন।
নিজে যেহেতু কবিতাপথের পথিক তাই কবির সঙ্গে পরিচয় থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু শিল্পীর সঙ্গে? এখানেও একজন কবিই আছেন মাঝখানে। তিনি রুবী রহমান, যিনি আমার বড় বোনেরই মতো, বন্ধু তো বটেই। পাপিয়া সারোয়ার হলেন রুবী আপার বোন; আবার শিল্পীবন্ধু শম্পা রেজার আপন খালা তিনি। সে সুবাদেই গড়ে ওঠে সম্পর্ক। তাই স্মৃতিভারও বেশি। দেশবরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জানা মানুষটিকে ঘরোয়াভাবে চেনার সুযোগ। স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের নির্বিবাদী এক সমীহজাগানিয়া মানুষ ছিলেন এই পাপিয়া সারোয়ার। শুধু নিজেই গানযাপন নয়, নতুনদেরও তৈরির দায়িত্ব বোধ করেছেন। আর তা থেকেই গীতসুধা সংগঠন গড়ে তোলা। আমরা যারা বিগত চল্লিশ বছর ধরে তার গান শুনে আসছিলাম, তারা বিলক্ষণ জানি ঢাকার জীবন থেকে কী অমূল্য রতন হারিয়ে গেল।
‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ উত্তাল ষাটের দশকে কবি হেলাল হাফিজের এই উচ্চারণ সর্বস্তরের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। তিনি ছিলেন এক দুঃখী কবি। বলেছেন, হরেক রকম কষ্ট আছে কষ্ট নেবে কষ্ট!/ লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট... সব কষ্টের অবসান হলো শুক্রবার। কবি চলে গেলেন।  কবিতা লিখে সব শ্রেণির মানুষের মনে স্থান করে নেওয়া কম কথা নয়। নিঃসঙ্গ মানুষ ও প্রেমিক কবি হেলাল হাফিজকে মনের নিভৃত কোণে ভালোবাসার আসন পেতে দিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয়ে আসন করে নেন হেলাল  হাফিজ। কবিতা সংকলনটি প্রকাশিত হওয়ার পর ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। এটি একটি রেকর্ড।


১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
[email protected]

মোহাম্মদ আলী

×